সিলেট সংবাদদাতা:: অপরিকল্পনা শুরু থেকেই যেন সঙ্গী কাজীরবাজার সেতুর। সেতু বাঁকা হয়েছে, সেতু থেকে খিলান বাদ পড়েছে পরিকল্পনাহীনতার কারণেই।
এবার নতুন করে ঘর ভাঙার আতঙ্ক ছড়িয়েছে সেতুর পাশের বাসিন্দাদের মাঝে, যারা ইতিমধ্যেই একদফা ঘর ভেঙে নতুন করে ঘর বেঁধেছেন। দ্বিতীয় দফা ভাঙনের মুখে পড়লে
অনেককেই ঠিকানাহারা হতে হবে। সেতুর উত্তর প্রান্তের সার্ভিস সড়ক প্রশস্তকরণের উদ্যোগ নেয়ায় আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী সেতুর উত্তরপ্রান্তের উভয় পাশের ৮ থেকে ১০ ফুট প্রস্থের সার্ভিস সড়ককে ১৮ ফুট প্রশস্ত করা হবে। কাজীরবাজারে সুরমা নদীর উপর গড়ে উঠা সেতুটি বলতে গেলে একটি অপরিকল্পনারই
ফসল। বারবার কাটাছেঁড়া হয়েছে নকশা। কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই কয়েক দফা নকশা পরিবর্তনের পর সেতুটি আঁকাবাঁকাও হয়ে ওঠে। যে কারণে সেতুর দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি পেয়ে
৩৬৬ মিটার থেকে ৩৯১ মিটারে দাঁড়ায়। ব্যয়ও বাড়ে, ৯৮ কোটি টাকার পরিবর্তে ব্যয় ধরা হয় ১৬২ কোটি টাকায়। সেতুটিতে নান্দনিকতার ছোঁয়া আনতে প্রথম নকশায় আর্চ বা
খিলান থাকলেও পরবর্তীতে তা বাদ দেয়া হয়েছে। যে জায়গায় সেতুটি নির্মিত হয়েছে সেখানে কোনো সেতু নির্মাণের পরিকল্পনাই ছিল না। বয়সের ভারে দুর্বল হয়ে পড়া
কিনব্রিজের বিকল্প হিসেবে ৭ম জাতীয় সংসদের স্পিকার আওয়ামী লীগ নেতা হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী যখন সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নেন তখন জায়গা হিসেবে কিনব্রিজের
স্থানটিকেই বেছে নেয়া হয়েছিল। ঐতিহ্যবাহী কিন ব্রিজের স্থলেই ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ঝুলন্ত সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা হয়। পরবর্তীতে সরকারের পালাবদল
হলে ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকার এ প্রকল্পটি বাতিল করে কিন ব্রিজকে জায়গায় রেখেই কয়েক শ’ মিটার পশ্চিমে নগরীর কাজীরবাজারে একটি গার্ডার সেতু নির্মাণের
উদ্যোগ নেয়। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মাধ্যমে ২০০৫ সালের ২৪শে ডিসেম্বর সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। কথা ছিল ২০০৭-০৮ অর্থবছরের মধ্যেই সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে। এরই মধ্যে আবার ক্ষমতার পালাবদল ঘটে। বিগত মহাজোট সরকার ২০০৯ সালের শেষদিকে সেতুর কাজ বন্ধ রেখে প্রকল্পটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়। দীর্ঘ সময় নিয়ে কাজ শেষ হওয়ার পর ২০১৫ সালের শেষদিকে সেতুটি খুলে দেয়া হয় যান চলাচলের জন্য।গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ২০১৫ সালের ৮ই অক্টোবর সেতুটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এত বিশাল সেতু হলেও এখনও এটি সব ধরনের যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া সম্ভব হয়নি। উত্তরে সেতুর সঙ্গে সংযুক্ত সড়কটি সেতুর তুলনায় যথেষ্ট অপ্রশস্ত তাই যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রাখা হয়েছে। তবে মূল এ সমস্যাটিকে পাশ কাটিয়ে সেতুর দুই পাশের সার্ভিস সড়ক প্রশস্তকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর এ উদ্যোগের ফলে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে সার্ভিস
সড়কের দুই পাশের বাসিন্দাদের মাঝে। সেতু তৈরির সময় এক দফা জায়গা ছেড়ে কোনোমতে টিকে আছেন তারা, নতুন করে জায়গা ছাড়তে হলে অনেককেই ঠিকানাহীন হতে হবে।সওজ
সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্পটিকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেতুর উত্তরে সিলেট প্রান্তের বিদ্যমান ২.৪৪ মিটার (৮ ফুট) থেকে ৩.০৫ মিটার প্রশস্ত (১০ ফুট) সার্ভিস সড়ককে ৫.৫০ মিটার প্রশস্ত (১৮ ফুট) করা হবে। এজন্য খান বাহাদুর (কেবি) ওয়াক্ফ স্টেটের ৭.৬৪ শতক ভূমিসহ সব মিলিয়ে ১৩.৫২ শতক ভূমি অধিগ্রহণ এবং কয়েকটি স্থাপনা অপসারণ করা হবে। এ কাজে ব্যয় ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ১১ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা। যার মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ব্যয় হবে ১১ কোটি ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।একই প্রকল্পের অংশ হিসেবে ব্রিজের ঢাকা প্রান্তে সেতুর সঙ্গে বরইকান্দি এলাকার সরাসরি সংযোগ স্থাপনে ৪৫০ মিটার সড়ক নির্মাণ এবং সড়কের প্রশস্ততা ৫.৫০ মিটারে বর্ধিত (১৮ ফুট) করণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৩ কোটি ১৮ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। যার মধ্যে নির্মাণ ব্যয় ৪ কোটি ৯২ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৩ একরের কিছু বেশি ভূমি অধিগ্রহণ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ কোটি ৫৬ লাখ ১৫ হাজার টাকা এবং ইউটিলিটি স্থানান্তর ব্যয় ৫০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। এ সড়ক নির্মাণে সিলেট পলি টেকনিক্যাল বোর্ডের ৬ তলা ভবনসহ বিদ্যমান ৭টি স্থাপনা অপসারণ করা হবে।রাস্তা প্রশস্তকরণের উদ্যোগে ঠিকানা হারানোর আশঙ্কায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে সেতুর দক্ষিণ প্রান্তেও।