ডেস্ক রিপোর্ট : : ফৌজদারি মামলায় চার্জশিট দেওয়ার আগ পর্যন্ত আসামিদের বারবার আদালতে হাজিরা দেওয়ার নিয়ম তুলে
দিতে নতুন আইন প্রণয়নের সুপারিশ করেছে আইন মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। তারা বলেছে, অভিযুক্ত হওয়ার আগেই হাজিরার নামে হয়রানি ন্যায় বিচারের পরিপন্থি।
অন্যদিকে কমিটির এই সুপারিশকে ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
রোববার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়। কমিটির সভাপতি আবদুল মতিন খসরুর সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশ নেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শামসুল হক টুকু, জিয়াউল হক মৃধা, সফুরা বেগম এবং আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী। এছাড়া বৈঠকে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক উপস্থিত ছিলেন।
কমিটির বক্তব্য হলো, ফৌজদারি মামলায় বারবার হাজিরা দিতে গিয়ে মানুষ সর্বশান্ত হচ্ছে। মামলার পর অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত শেষ করে চার্জশিট দাখিলে দীর্ঘসময় লেগে যায়। দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই আসামিকে এই সময়ের মধ্যে দফায় দফায় হাজিরার নামে হয়রানির শিকার হতে হয়, যা ন্যায় বিচারের পরিপন্থি। বিচারপ্রার্থীদের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতেই এই সুপারিশ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি আবদুল মতিন খসরু সাংবাদিকদের বলেন, তদন্তাধীন ফৌজদারী মামলায় আসামিরা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিলে মামলার চার্জশিট না হওয়া পর্যন্ত তাদের তারিখে তারিখে আদালতে হাজিরা দিতে হবে না- এই মর্মে আইন করার জন্য তারা সুপারিশ করেছেন। কারণ চার্জশিট না হওয়া পর্যন্ত কেউ আইনের দৃষ্টিতে আসামি নন।
তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায় একটা মামলায় ৬০-৭০ জনকে আসামি করে এজাহার দায়ের হয়। কিন্তু অনেক দিন পর চার্জশিট দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন আসামিরা নির্দিষ্ট সময় পরপর আদালতে হাজিরা দিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হন। চার্জশিট দাখিলের আগে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয় না। এর আগে আসামির আদালতে যাওয়া ও না-যাওয়ার মধ্যে কিছু যায় আসে না।
আবদুল মতিন খসরু বলেন, এক মাস পর পর আসামিদের আদালতে যাওয়ার কারণে উকিল, পেশকার থেকে শুরু করে ঘাটে ঘাটে টাকা দিতে হয়। ফলে ওই আসামির পরিবার এমনিতেই ধ্বংস হয়ে যায়। এটি বন্ধ করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
এটি আইনি প্রক্রিয়ার অপব্যবহার ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আদালতে আত্মসমর্পণ করে একবার জামিন নেওয়ার পরে চার্জশিট দেওয়ার আগ পর্যন্ত জামিন বহাল রাখা উচিত। তাহলে আসামিদের ওই এক মাস পর পর হাজিরা দিতে হবে না। এই লক্ষ্যে একটা আইন করার জন্য কমিটি সুপারিশ করেছে।
তিনি জানান, কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রয়োজনে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে আলাপ করা যেতে পারে।
বৈঠক শেষে সমকালের সঙ্গে আলাপকালে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় কমিটির সুপারিশ যৌক্তিক। সুপারিশটি সরকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। এজন্য ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধনও করতে হবে বলে।
তিনি আরও বলেন, মামলা নেওয়ার সময়েও বিবেচনা করা প্রয়োজন ৬০-৭০ বা তারও বেশি লোককে একই মামলায় আসামি করার যৌক্তিকতা কতটুকু। আসামিরা যাতে পালিয়ে যেতে না পারে, সেজন্যই বারবার হাজিরার বিষয়টি রাখা হয়েছে। তবে চার্জশিটের আগে আসামিদের লম্বা সময় জামিন দেওয়া যেতে পারে- এটা অবশ্য আদালতের এখতিয়ার।
তিনি বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধিতে মামলার তদন্ত পদ্ধতি সম্পর্কে বলা আছে। বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
এদিকে, সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ফৌজদারি মামলায় চার্জশিট দাখিলের আগ পর্যন্ত আসামি জামিনে থাকবেন- এমন আইন করতে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা হয়েছে। বৈঠকে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য শিগগিরই বিচার প্রক্রিয়া ঢেলে সাজানোর কথা বলা হয়। এ সময় পিপি ও এপিপিদের বেতন-ভাতা সম্মানজনক হারে বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়।