জাহেদুল ইসলাম সিলেট থেকে::: : স্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের তদারকিতে সিলেটের বিশ্বনাথে প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবন নির্মান কাজে অনিয়ম-দূর্নীতির পাহাড়সম অভিযোগ উঠেছে।
গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনার নির্মান কাজে নিম্নমানের পাথর, পাইলিং ভাঙ্গা ডাস্ট, জানালায় নিম্নমানের এঙ্গেল ব্যবহার ও চালনি না দিয়ে ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর সামগ্রী
ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্মান কাজে এলাকাবাসীর কাছ থেকে পাওয়া অনিয়ন-দূর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার কাজ পরিদর্শন করেন স্থানীয় এমপি ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া। কাজের অনিয়ন-দূর্নীতির অভিযোগের সত্যতা পেয়ে স্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের প্রকৌশলীদের শনিবার প্রকল্প এলাকায় থাকার নির্দেশ দেন। কিন্তু শনিবার দুপুরে সিলেট ও বিশ্বনাথ বালাগঞ্জের স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে নিয়ে এমপি এহিয়া চৌধুরী প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে আসলেও সেখানে অনুপস্থিত ছিলেন
স্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের প্রকৌশলী’সহ কর্মকর্তা-কর্মচারী, এমনকি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘অনিক ট্রেডিং করপোরেশন’র কাউকে।অভিযোগ রয়েছে, প্রকল্পের
কাজে পাথর বা ইটের খোঁয়া দিয়ে নির্মান কাজ করার কথা থাকলেও টিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন পুরাতন বিল্ডিং-এর পাইলিংয়ের ডাস্ট (ব্যবহৃত নিম্নমানের পাথর) দিয়ে কমপ্লেক্সের নতুন ভবনের ছাদ ঢালাই’সহ পিলার নির্মানের কাজ করছে। যে পাথর রয়েছে তাও মাটি ও ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর। তা সত্যেও চালনি না দিয়ে চলছে
কাজ। ফিলারের রডের সাথে বাঁধা রিং-এর দূরত্ব প্রায় ৬-৭ ইঞ্চি পর পর হওয়ার কথা থাকলেও সেই রিংগুলো দেওয়া হয়েছে প্রায় ১৪-১৬ ইঞ্চি পর পর। কাঁচের জানালায়
ব্যবহৃত গ্রীলের এঙ্গেল ৩ এমএম’র পরিবর্তে দেড় এমএম ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকি বিভিন্ন জানালার মাপেও দেখা গেছে প্রায় ১ ইঞ্চি করে কম।
পরিদর্শনকালে এমপি’র সাথে উপস্থিত থাকা সিলেট থেকে আসা ইঞ্জিনিয়ার ছদরুল ইসলাম ও বিশ্বনাথের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোশারফ হোসেন বলেন, যে নির্মান সামগ্রী দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নতুন ভবন নির্মানের কাজ চলছে তা নিম্নমানের। এতে ভবনের স্থায়ীত্ব হুমকির মধ্যে থাকবে। সঠিকভাবে নির্মান কাজ করা না হলে ভবনটি
থাকবে ঝুঁকিপূর্ণ।পুরাতন পিলারের ডাস্ট (নিম্নমানের পাথর) ব্যবহারের বিষয়টি স্বীকার করে সাইট ইঞ্জিনিয়ার অঞ্জন মন্ডল বলেন- উর্ধ্বতম কর্তৃপক্ষের অনুমতি
স্বাপেক্ষে তিনি দুটি ভবনের ভিটায় পাকায় এগুলো ব্যবহার করেছেন। আর জানালায় ব্যবহৃত ষ্টিলের এঙ্গেলে কিছুটা ব্যতিক্রম রয়েছে বলেও স্বীকার করেন। স্থানীয় ইউপি মেম্বার নাসির উদ্দিন ও এলাকার মুরব্বি আব্দুস ছাত্তার অভিযোগ করেন, ভবন নির্মাণে শুরু থেকেই অনিয়ন-দূর্নীতি চলে আসছে। কেউ এর প্রতিবাদ করতে আসলে এলাকাবাসীকে চাঁদাবাজির মামলায় আসামী করার হুমকি প্রদান করে টিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন। তাদের হাত নাকি অনেক লম্বা, তাই ভয়ে অনিয়ম-দূর্নীতির প্রতিবাদ করা ছেড়ে দিয়েছেন এলাকাবাসী। তবে এমপি সাহেবকে অবহিত করা হয় বিষয়টি। তিনি আসায় অভিযোগের সত্যতাও পেয়েছেন।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ নুর উদ্দিন বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবনের নির্মানে অনিয়ন-দূর্নীতি পাহাড়’সম অভিযোগ রয়েছে এবং এর সত্যতাও পাওয়া গেছে। সিডিউল মতো কাজ না হলে মানুষের উপকারের চেয়ে ভবনটি বড় ধরণের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষকে ওই অনিয়ম-দূর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন ও সিডিউল মতো কমপ্লেক্সের ভবন নির্মান কাজ সম্পন্ন করার উপজেলাবাসীর পক্ষ থেকে জোর জানাচ্ছি। স্থানীয় এমপি ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া বলেন, এলাকাবাসীর কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে প্রকল্পের নির্মান কাজে অনিয়ন-দূর্নীতি দেখতে পাই। সাইট ইঞ্জিনিয়ারকে বলে যাই আজ (শনিবার) আবারও এখানে (স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে) আসব। তখন যেন তাদের উর্ধ্বতম কর্তৃপক্ষও এখানে (স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে) উপস্থিত থাকেন। অথচ এসে কাউকে পেলাম না। বরং আমি যাতে এখানে (প্রকল্প এলাকায়) না আসি সেজন্য একটি কুচক্রি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়ন্ত্রে লিপ্ত হয়ে পড়ে। ভবন নির্মান কাজে ডাস্ট ব্যবহার ও ১৪-১৬ ইঞ্চি পর পর রিং স্থাপন করার অভিযোগ সত্য নয় দাবী করে স্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তর নির্বাহী প্রকৌশলী (রবিবার) ফোনআলাপে একেএম বদরুল ইসলাম বলেন, বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবন নির্মান কাজ সিডিউলের নিয়ম অনুযায়ীই হচ্ছে, এখানে কোন অনিয়ম দূর্নীতি হচ্ছে না। ভবন নির্মান কাজে সিডিউলের ব্যতিক্রম কোন কাজ হলে ও এর সত্যতা পাওয়া গেলে তা সাথে সাথেই সংশোধন করা হবে