নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিঃ: পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নারায়ণগঞ্জ
অটো রিকসা, ইজিবাইক চোর, ছিনতাইকারী, অপহরণকারী ও সংঘবদ্ধ খুনি চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা ও নিলফামারী থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের একজনের কাছ থেকে একটি সুইচ গিয়ার চাকু উদ্ধার করা হয়। এবং ৫টি চোরাই অটো রিকসা গ্যাজের সন্ধান পেয়েছে।
বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পিবিআইয়ের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানানো হয়।
পিবিআই নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জানান, গত ৬ সেপ্টেম্বর ফতুল্লার নরসিংহপুর কাউয়াপাড়াস্থ জাহাঙ্গীরের গ্যারেজ থেকে প্রতিদিনের মতো ব্যাটারি চালিত মিশুক নিয়ে বের হয় আব্দুল কুদ্দুস। কিন্তু রাতে সে বাসায় না ফেরায় এবং বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করে তার সন্ধান না পেয়ে তার স্ত্রী রীনা খাতুন ১৮ সেপ্টেম্বর ফতুল্লা মডেল থানায় জিডি করেন। থানা পুলিশের পাশাপাশি পিবিআই জিডি নিয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে। ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা থাকায় পিবিআইয়ের সহায়তায় রীনা খাতুন অপহরণ মামলা দায়ের করে। পিবিআই স্ব-উদ্যোগে মামলটির তদন্তভার গ্রহণ করে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত একে একে ৬জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো-শাহ আলম (৩৮), পিতা-মৃত আঃ সালাম, সাং-চৌরার বাড়ী, ধামগড়, বন্দর, নারায়নগঞ্জ, বর্তমানের সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিল, হালিম (৪২) পিতা-মৃত নুরুল ইসলাম, সাং-আমতলী, গৌরিচন্না, বরগুনা, মোঃ শহিদুল (৩২) পিতা-আঃ খালেক সাং- জোলাগাতি, কাউখালী, পিরোজপুর, বাদশা (৪৭) পিতা-মৃত আঃ রব, সাং-বউ ঠাকুরানী, বরগুনা, বর্তমানে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী, মোঃ আসলাম (৩০), পিতা-মোঃ সালাম মিয়া, সাং- হাতুরাপাড়া ৮নং ওয়ার্ড, সোনারগাঁ, মোঃ মনির (৪০) পিতা-মৃত আলী আকবর, সাং- পেঁচাইন ৩ নং ওয়ার্ড, সোনারগাঁ।
নারয়ণগঞ্জের সোনারগাঁ ও আড়াইহাজার, নীলফামারীর ডিমলা এবং ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় আসামী শাহ আলমের কাছ থেকে ভিকটিম আঃ কুদ্দুসের মোবাইল এবং ছিনতাই কাজে ব্যবহার করা একটি ডাবল ডেগার (সুইচ গিয়ার চাকু) জব্দ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা তাদের অটোরিক্সা-ইজিবাইক ছিনতাইয়ের অভিনব কৌশলের কথা স্বীকার করে। তাদের ভাষ্যমতে, তারা মূলত ৮/১০ জনের একটি গ্রুপ নারায়নগঞ্জ সহ আশেপাশের বিভিন্ন জেলায় অটোরিক্সা-ইজিবাইক, অটো মিশুক ছিনতাই করে। এবং ৩টি পদ্ধতিতে তারা তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা করে।
অপহরণ ও খুন করে অটো ছিনতাইঃ
চক্রটি কৌশল করেই অটোরিক্সা ভাড়া করে তাদের পূর্বনির্ধারিত স্থানে যাওয়ার চেষ্টাকালে কখনো যদি ওই ড্রাইভার ছিনতাই চক্রের কৌশল বুঝে ফেলে কিংবা কোন সন্দেহ তৈরি হয় তখন ওই ড্রাইভার তাদেরকে গাড়ী থেকে নামিয়ে দিয়ে চলে যেতে চাইলে ছিনতাই চক্রের সদস্যগন প্রথমে উক্ত ড্রাইভারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অটো ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। পরবর্তিতে গাড়ীর ড্রাইভার ছিনতাই চক্রকে গাড়ীটি ছিনতাইয়ে বাধা দিলে তাৎক্ষনিক তাকে উর্পযুপরি ছুরিকাঘাত করে মৃত অথবা অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে দিয়ে গাড়ীটি ছিনতাই করে নিয়ে যায়।
সূত্রে বর্নিত মামলাটি তদন্তকালে আসামীদেরকে গ্রেপ্তার করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে আসামীরা তাদের অটোরিক্সা-ইজিবাইক ছিনতাইয়ের অভিনব কৌশলের কথা জানায়। তারা জানায় অত্র মামলার ভিকটিম আব্দুল কুদ্দুসের ক্ষেত্রে তারা তাদের পদ্ধতি-১ অবলম্বন করে ঘটনার দিন ৬ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা অনুমান ৭ টায় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ছিনতাই চক্রের সদস্য আসামী শাহ আলম, হালিম এবং রাশেদ ওরফে রিয়ন ভিকটিম মিশুক চালক আঃ কুদ্দুসকে সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোড স্ট্যান্ড থেকে ৫০০ টাকা ভাড়ায় কালীবাজারে আপ-ডাউন যাওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। পথিমধ্যে তারা আদমজী এলাকায় ভিকটিম ড্রাইভারকে নিয়ে পূর্বনির্ধারিত চায়ের দোকানে নিয়ে চা খেয়ে ঘনিষ্ঠতা বাড়ায়। তারা নারায়ণগঞ্জ সদরের টানবাজারে গিয়ে ৩০০ টাকায় আধা লিটার মদ কিনে। মদ কেনার পর তারা খানপুর হাসপাতালের আশপাশের স্থানে গিয়ে নিজেরা মদ খায় এবং ড্রাইভার কুদ্দুসকে মদ খাওয়ার প্রস্তাব দিলে সে মদ খেতে রাজি হলে কৌশলে আসামী শাহ আলম মদের মধ্যে উচ্চমাত্রার ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দেয়। ঔষধ মেশানো মদ খাইয়ে আব্দুল কুদ্দুসসহ তারা আবার চিটাগাং রোডের দিকে যাত্রা শুরু করে। মদ খাওয়ার ২০-২৫ মিনিট পরে আস্তে আস্তে আব্দুল কুদ্দুস অচেতন হয়ে পড়লে আসামী শাহ আলম ড্রাইভারকে নিয়ে আদমজী এলাকার বিহারী পট্টিতে নেমে পড়ে এবং আব্দুল কুদ্দুসকে বিহারী পট্টিতে ময়লার ভাগারের পাশে রেখে চলে যায়। চক্রের অপর ড্রাইভার সদস্য হালিম এবং তার সহযোগী আসামী রাশেদ ওরফে রিয়নকে নিয়ে তাদের পূর্বনির্ধারিত চোরাই গাড়ীর ক্রেতা আসামী আসলামের কাছে গাড়ীটি ৩৬ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। আসামী আসলাম গাড়ীটির রং, সীট কভার এবং হুড চক্রের অপর সদস্য আসামী মনিরের মাধ্যমে পরিবর্তন করে ফেলে। উক্ত ছিনতাই চক্রের সকল আসামীদের গ্রেপ্তার করার পর তাদের দেয়া তথ্যমতে ছিনতাই হওয়া মিশুক অটো রিক্সাটি আসামী আসলাম এবং মনিরের যৌথ গ্যারেজের পেছন থেকে উদ্ধার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদকালে তারা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করে যে, তারা প্রায় ৩ বছর যাবৎ অনুমান ২৫০ এর বেশী ইজিবাইক এবং অটোরিক্সা ছিনতাই করেছে। তদন্তকালে ঢাকা,নারায়নগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় আরো ৫টি চোরাই গ্যারেজের সন্ধান পাওয়া গেছে। ওই গ্যারেজগুলোতে অতিদ্রুতই অভিযান পরিচালনা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, মামলার ভিকটিম উদ্ধারসহ এই চক্রের আরও কোন সদস্য জড়িত আছে কী না তা তদন্ত অব্যাহত আছে