এশিয়া খবর ডেস্ক:: পুরান ঢাকায় অবস্থিত কেমিক্যাল গুদামগুলো আগামী ৬ মাসের মধ্যে স্থানান্তর করার কথা জানিয়েছেন
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। রাজধানীর নিকটবর্তী ২০০ একর জমি নিয়ে সেখানে কেমিক্যালপল্লী করা হবে। ৬ মাসের মধ্যে সেখানে ব্যবসায়ীদের প্লট বুঝিয়ে দেওয়া হবে। ব্যবসায়ীরাও বলেছেন, তারা প্লট বুঝে পেলে সেখানে তাদের কেমিক্যাল গুদাম সরিয়ে নেবেন। শিল্পমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুসারে কেমিক্যালপল্লীর কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। ইতিমধ্যে সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
সোমবার পুরান ঢাকার চকবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর করণীয় নির্ধারণে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শিল্প মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন শিল্পমন্ত্রী। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের আরও ব্রিফ করেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ও ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. আবদুল হালিম।
বৈঠকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, রাজউক, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, পরিবেশ অধিদপ্তর, ঢাকা ওয়াসা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি এবং এফবিসিসিআইসহ অন্যান্য সংশ্নিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা সভায় অংশ নেন।
শিল্পমন্ত্রী বলেন, অতিসত্বর কেমিক্যাল গোডাউন সরানো হবে। আগামী ছয় মাসের মধ্যেই স্থানান্তর করা হবে। ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে। শিল্পে সম্পৃক্ত যারা আছেন, বিশেষ করে চামড়া খাতে ব্যবহূত কেমিক্যাল গুদামগুলো চামড়া শিল্পনগরীর পাশে নেওয়া হবে। এ রকম প্রতিটি শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত কেমিক্যাল গুদামগুলো ওই শিল্পের কাছাকাছি জায়গায় নেওয়া হবে।
মন্ত্রী জানান, এর বাইরে ২০০ একরের আলাদা কেমিক্যালপল্লীতে গোডাউনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। তিনি বিশ্বাস করেন, সবাই আন্তরিকভাবে কাজ করলে এটা সম্ভব। বর্তমান সরকার ব্যবসাবান্ধব। ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করা হবে। বিসিকের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গা উন্নয়ন করে গুদামের ব্যবস্থা করা হবে। মূলত এ দায়িত্ব শিল্প মন্ত্রণালয়ের। দীর্ঘদিনের এ সমস্যা সমাধান করার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন রয়েছে। সবার সুপারিশের আলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে ইতিমধ্যে সংস্থাগুলোর যেসব সুপারিশ এসেছে তার আলোকে সিদ্ধান্ত হয়েছে পুরান ঢাকায় ক্ষতিকারক কেমিক্যাল ও প্লাস্টিকসহ কোনো ক্ষতিকর গুদামই থাকতে পারবে না। কেমিক্যালপল্লী করা ছাড়াও অন্যান্য শিল্পের জন্য ঢাকার বাইরে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
মন্ত্রী জানান, অতিসত্বর সমাধান চান প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে এই কার্যক্রমে বিভিন্ন সংস্থা থেকে যেসব সহযোগিতা পাওয়া যাবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পরস্পর দোষারোপ করে লাভ হবে না। তিনি আরও বলেন, কেমিক্যাল গুদাম এমনই স্থানে নেওয়া হবে যেখান থেকে তাদের আর সরতে হবে না। এটা যত্রতত্র গড়ে উঠতে দেওয়া হবে না। এটা সুপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হবে। আবার যাতে কোনো সমস্যা তৈরি না হয়।
শিল্প প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে ব্যবস্থা হবে। যাতে ব্যবসায়ীদের কোনো সমস্যা না হয়। কারণ তারা সরকারকে ভ্যাট ও কর দিচ্ছেন। দেশের উন্নয়নের সহায়ক শক্তি হিসেবে তারা কাজ করছেন। এটা সরকারের দায়িত্ব তাদের ভালোভাবে ব্যবসা করতে দেওয়া। যত দ্রুত সম্ভব তাদের জায়গার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। সেখানে কেমিক্যাল গোডাউন থাকবে। সেখানে কোনো শিল্প-কারখানা হবে না। সেই গোডাউন থেকে পণ্য সরবরাহ করবে। প্রসাধনী পণ্য গোডাউন থেকে সরবরাহ করবে। কেমিক্যালপল্লীতে কোনো শিল্প বা কারখানা হবে না। বিসিকের অনেক প্লট খালি আছে। সেখানে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সুবিধা দেওয়া হবে। কেরানীগঞ্জের আশপাশে এই পল্লী করা হবে। প্লাস্টিক শিল্পনগরীর জন্য জায়গা নেওয়া হচ্ছে। তাদের জন্য জায়গা দ্রুত প্রস্তুত করে দেওয়া হবে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, সবার দায়িত্ববোধ যদি থাকত তাহলে বহু আগে জায়গা বরাদ্দ হতো। প্লাস্টিকপল্লীর বিষয়ে একটি মামলা জটিলতা ছিল। এটি সমাধান হয়েছে। এখন অতিদ্রুত প্লট দেওয়া হবে।
শিল্প সচিব বলেন, পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ীদের দ্রুত প্লট দেওয়া হবে। এ ব্যবসায়ীদের কেমিক্যালপল্লী ও প্লাস্টিক শিল্পনগরীতে স্থানান্তর করা হবে। এ ছাড়া শিল্পভিত্তিক কেমিক্যাল গোডাউন সরানোর পরিকল্পনা রয়েছে। বিশেষ করে চামড়া শিল্পের কেমিক্যাল ওই শিল্পনগরীর আশপাশে নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে নির্ধারিত কেমিক্যালপল্লীর জায়গা পর্যাপ্ত নয়। এটি জনপদ থেকে দূরে করতে কেরানীগঞ্জ, নাবাবগঞ্জ ও সাভারে জায়গা দেখা হয়েছে। এসব জায়গায় ২০০ একরের পল্লী করা হবে। এর বাইরে চট্টগ্রাম বন্দরের কাছে মিরসরাই শিল্পনগরীতে ১০০ একরের জায়গা নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, এ জন্য ক্র্যাশ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পুরান ঢাকায় ৪ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ওখানে যারা আছেন তাদের মধ্যে বড় ব্যবসায়ীরা নিজ দায়িত্বে যাবেন। ইতিমধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান গেছে। অন্যদের জন্য মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা করে দেবে।