এশিয়া খবর:: চট্টগ্রাম কারাগারের অনিয়ম-দুর্নীতি খুঁজতে গিয়ে গত ১০ বছরে
শীর্ষ পদগুলোয় কর্মরত কর্মকর্তাদের অবৈধ আয়ের যেসব তথ্য বেরিয়ে আসছে, তা কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসার মতোই।
এ তদন্তের সূত্র ধরেই গত রোববার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তাদের হাতে ৮০ লাখ টাকাসহ গ্রেফতার হয়েছেন চট্টগ্রাম কারাগারের সাবেক ডিআইজি (প্রিজন) এবং বর্তমানে সিলেটে কর্মরত পার্থ গোপাল বণিক।
এর আগে, গত বছর অক্টোবরে ঘুষের ৪৭ লাখ টাকাসহ হাতেনাতে গ্রেফতার হন চট্টগ্রাম কারাগারের তৎকালীন জেলার সোহেল রানা। বস্তুত ওই দুর্নীতির ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গঠিত কমিটির মাধ্যমে শুরু হয় তদন্ত। পাশাপাশি শুরু হয় দুদকের পৃথক অনুসন্ধান।
জানা গেছে, ৯ মাসের যৌথ অনুসন্ধান ও তদন্তে অন্তত ৫০ কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। আমরা আশা করব, এর মধ্য দিয়ে প্রকৃত দুর্নীতিবাজরা চিহ্নিত হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে আইনগত ব্যবস্থা। এটি জরুরিও বটে।
শুধু চট্টগ্রাম কারাগার নয়, দেশের অন্যান্য কারাগারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধেও রয়েছে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ। বিভিন্ন কারাগারে কয়েদি নির্যাতন, অনিয়ম-দুর্নীতি যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। অভিযোগ আছে, বন্দিদের খাবার, স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ, কারাগারে ভালো স্থানে থাকার ব্যবস্থা- এ সবকিছু চলে টাকার বিনিময়ে।
টাকার বিনিময়ে সুস্থ হাজতি ও কয়েদিকে হাসপাতালে রাখা হয়। দুর্ধর্ষ আসামিরা কারাগারে বসেই টাকার বিনিময়ে মোবাইল ফোনে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে। অনেক ক্ষেত্রে দেয়া হয় খুনের নির্দেশনা।
টাকার বিনিময়ে সোনা চোরাকারবারি ও মাদক ব্যবসায়ীরাও কারাগারে বিলাসী জীবনযাপন করে। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ময়মনসিংহের ত্রিশালে তিন দুর্ধর্ষ জঙ্গি ছিনতাইয়ের পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছিল কারাগারে বসে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি দমন করা উচিত কঠোর হাতে।
কারাগারকে বলা হয় সংশোধনাগার। সেখানে অপরাধীদের রাখা হয় কৃত অপরাধের সাজা প্রদানের পাশাপাশি সংশোধনের উদ্দেশ্যে। সেই কারাগারেই যদি চলে নানা ধরনের অপরাধকর্ম, তাহলে তা উদ্বেগের বিষয় বৈকি! আমরা মনে করি, কারাগারগুলোকে দুর্নীতিমুক্ত করার জন্য এগুলো ঢেলে সাজানো প্রয়োজন।
এ উদ্দেশ্যে কারাগারে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেশে-বিদেশে আধুনিক কারাগার ব্যবস্থাপনার ওপর প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে।
কারাগারের ভেতরে-বাইরে সিসি টিভি সংযোগের ব্যবস্থাসহ উন্নত প্রযুক্তির মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। দূর করতে হবে জনবল সংকট। এসব পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে দেশের কারাগারগুলো আধুনিক সংশোধনাগারে পরিণত হয়ে উঠবে।