সদ্য সংবাদ

 অটো মালিক- শ্রমিক সমিতির চেক বিতরণ ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত  উত্তরাঞ্চলের মাটিতে বাড়ছে অম্লত্ব, কমছে ফলন  চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে নেসকো মিটার রিডারদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি  রুয়েটে সিটিজেন চার্টার বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত  ঈশ্বরদী রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত  মল্লিকের চর শিক্ষা কল্যাণ ট্রাস্টের মেধাবৃত্তি পরীক্ষার পুরস্কার বিতরণ।  কচিকন্ঠের আসরের প্রতিনিধি সন্মেলন অনুষ্ঠিত।  গুজব মোকাবেলায় গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে রাজশাহীতে সিজিএস’র কর্মশালা  রাজশাহী সাংবাদিক সংস্থার যাত্রা শুরু  শামীম ওসমান ১০ বছরেও শোধ করেনি বন্ধুর ২৬ লাখ টাকা।  মল্লিকের চর শিক্ষা কল্যান ট্রাস্টের শিক্ষা বৃত্তির ফলাফল প্রকাশিত।  মল্লিকের চর শিক্ষা কল্যান ট্রাস্টের উদ্যোগে,মেধা শিক্ষা বৃত্তি প্রদান  রুয়েটে প্রথমবারের মতো ‘ইন্ডাস্ট্রি একাডেমিয়া কোলাবোরেশন মিট’ অনুষ্ঠিত  ফল মার্কেটের দাবি রাজশাহীর ফল ব্যবসায়ীদের  নারায়ণগঞ্জকে মাদকমুক্ত করার অঙ্গীকার করলেন শামীম ওসমান  সংসদে কপিরাইট বিল পাস   কাস্টমসের ২৭০ কর্মকর্তাকে একযোগে বদলি  ভিয়েতনামে পৌঁছে ভারতের উদ্দেশে যা বললেন বাইডেন  নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় ইয়াবসহ যুবক আটক   সাঘাটায় কাঠ পুড়িয়ে চলছে কয়লা তৈরি

এতিমের হক, চামড়ার দাম ও শিল্পের সমাধি

 Thu, Aug 15, 2019 10:02 PM
এতিমের হক, চামড়ার দাম ও শিল্পের সমাধি

এশিয়া খবর ডেস্ক:: ‘এতিমের হক’ কথাটি আমাদের হালের রাজনীতিতে চালু একটি কথা।

 বলতে পারেন মোক্ষম একটি ‘শব্দাস্ত্র’। তবে এবারের ঈদে এই ‘শব্দাস্ত্র’টি ব্যবহৃত হচ্ছে অন্যক্ষেত্রে, অন্যমাত্রায়। বিশেষ করে কোরবানির পশুর চামড়ার দরপতন ‘এতিমের হক’ শব্দটিকে দিয়েছে এক করুণ অভিব্যক্তি।


চামড়া শিল্প দেশের অর্থনীতির সাফল্যগাথায় স্বীকৃত হতো একসময়। সেই স্বীকৃতির বড় কারণ ছিল কোরবানির পশু হতে প্রাপ্ত চামড়া। মূলত পাট এবং চামড়া শিল্পের ওপর ভিত্তি করেই আমাদের শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির গোড়াপত্তন। পাটের কথা আজ ইতিহাস। পাটকলগুলোর যন্ত্রপাতি যখন লুট হয়ে গেলো, চালু করা গেল না বন্ধ পাটগুলো। উল্টো বন্ধ হতে লাগলো বাকিসব।

তখন থেকেই পাটের মরণদশা শুরু। এখন তো পাট শিল্প সমাহিত। আদমজী নেই। যাও চামড়া শিল্পটা টিকে ছিল, এক দশকে সেটারও ‘হাতে হারিকেন’ উঠেছে। আর এবার, সেই ‘হারিকেন’টাও নিভুনিভু প্রায়। কোরবানির পশুর চামড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষ মাদ্রাসায় দান করেন বা মাদ্রাসায় বেঁচে দেন। আর এই দান বা বেঁচে দেয়ার কারণ হলো মাদ্রাসাগুলোর এতিমখানা। যে এতিমদের দেখার কেউ নেই, মাদ্রাসার এতিমখানাই তাদের ভরসা। এতিম আমরাও যাদের বাবা কিংবা বাবা-মা দুজনেই গত হয়েছেন। কিন্তু মাদ্রাসার এতিমগুলোর খেয়ে পড়ে বাঁচার অবলম্বনই অন্যের দান-ধ্যান, আর কোরবানির পশুর চামড়া।

যে চামড়া বিক্রির টাকায় এই অবলম্বনহীন এতিমদের অন্তত কিছুদিনের অন্ন-বস্ত্রের ব্যবস্থা হয়। এবার সে আশায় গুড়ে বালি। গরুর চামড়াই বিক্রি হচ্ছে আশি থেকে এক’শ টাকায়। গণমাধ্যম জানাচ্ছে, খাসির চামড়া বিক্রি হচ্ছে দশ টাকাতেও। সিলেটের একটি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বিশ হাজার টাকার লবণ কিনেছিল চামড়া সংরক্ষণের জন্য। কিন্তু তাদের সেই লবণের টাকাও উঠবে না চামড়া বিক্রির টাকায়; এমনটাই গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন তারা। এবার বাইরে চামড়া বিক্রি করতে না পারায় কিংবা স্বল্পমূল্যের কারণে বেশিরভাগ চামড়াই মাদ্রাসা তথা এতিমদের জন্য দান করে দেয়া হয়েছে। বেশি দান পাওয়াতে উল্টো বিপাকে পড়েছেন মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। তারা এই চামড়া নিয়ে কী করবেন। সংরক্ষণ করতে গেলে লবণের টাকা উঠবে না। বিক্রি করতে গেলে পরিবহণ খরচ উঠে আসবে না।

তাই বাধ্য হয়েই অনেক জায়গায় চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলতে হয়েছে। ভর্তুকি দেয়ার চেয়ে বরং পুঁতে ফেলাই শ্রেয় মনে করেছেন তারা। এক অর্থে বলা বলা যায়, পাটের মতন চামড়া শিল্পেরও এটা প্রতীকী সমাহিতকরণ। এখন বলা হচ্ছে কাঁচা চামড়া রপ্তানির কথা। কিন্তু বাঁধ সেধেছেন ট্যানারি মালিকরা। এটা করলে নাকি তাদের সাত হাজার কোটির টাকার বাণিজ্য শেষ।

আশ্চর্য! এত টাকার বাণিজ্য হয়, অথচ বিক্রি করতে গেলে দাম পাওয়া যায় না, এটা কেমন কথা। এই যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। বাণিজ্যের অংক আর বর্তমান চামড়ার দরের মধ্যে যে ফাঁকা জায়গাটি সেটাই সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটই দুটো জায়গার মধ্যে ব্যালেন্স করতে দেয় না। যার ফলে সৃষ্টি হয় সংকটের। যেমন এখন হয়েছে। যাক গে, চামড়া বিক্রির কথায় আসি। কাঁচা চামড়া দ্রুত বিক্রির জায়গা কোথায়। উত্তর খুব সহজেই দেয়া যায়, বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশীর আড়তে। প্রতিবেশীদের গো-হত্যায় আপত্তি থাকলেও ‘গো’ এর চামড়া নিতে বা কিনতে আপত্তি নেই। ‘বাণিজ্যে বসতি লক্ষ্মী’ বলে কথা। রূপার থালার যেমন কোন জাতের দোষ নেই, তেমনি গরুর চামড়ারও নেই।

অবস্থাদৃষ্টে মরা গরুর চামড়ায় ‘চামারে’র ভাগ নেয়ার গল্পটি মনে পড়ে যায়। ওই যে, ভাগের লোক বেশি হওয়াতে দূর থেকে চাকুটি ছুড়ে দিয়ে ‘চামার’ তার ভাগটি নিশ্চিত করেছিল, সেই গল্পটি। আমাদের দেশটাই এখন বোধহয় এখন সেই গরু।

সিন্ডিকেটের নামে চলছে ভাগাভাগি। সাংবাদিক ও কলামিস্ট পীর হাবিবুর রহমান সামাজিকমাধ্যমের মন্তব্য অন্তত তাই বলে। তিনি বললেন, ‘খা, খা, খেতে থাক। এতিমের চামড়াটাকেও খেয়ে নে! কৃষকের ধান খেয়েছিস, শেয়ার বাজার ব্যাংক লুটেছিস, ভেজাল খাবার ও পণ্যে মুনাফা লুটেছিস! লুটে নে।’

একুশে পদক পাওয়া লেখক মঈনুল আহসান সাবের টিপ্পনী কাটলেন, ‘কী আশ্চর্য, শেয়ারবাজারে দরপতন থাকলে চামড়ার বাজারে থাকবে না!’ কেন থাকবে না, অবশ্যই থাকবে। ‘কেউ খাবে তো, কেউ খাবে না তা হবে না।’ শেয়ার বাজার সিন্ডিকেটের যদি সুইস ব্যাংকের ‘প্রবৃদ্ধি’ বাড়ে, তবে চামড়া সিন্ডিকেট কী দোষ করেছে!

প্রবাসী সাংবাদিক, শিক্ষক ও সংবাদ বিশ্লেষক মাসকাওয়াথ আহসান বললেন, ‘অমুকের চামড়া তুলে নেবো আমরা; এরকম শ্লোগানের মাধ্যমে সংগৃহীত চামড়ার পর্যাপ্ততার কারণেই হয়তো কোরবানির চামড়ার দরপতন ঘটেছে।’ আপাত রম্য মনে হলেও, মূল অর্থে হয়তো এটাই ঠিক। শ্লোগান মানেই রাজনীতি, আর রাজনীতিই হলো সবকিছুর চালিকা শক্তি। এক সময় ছিল, যারা রাজনীতি করতেন, তাদের সঙ্গে মেয়ে বিয়ে দিতে চাইতো না কেউ। আয় রোজগার নেই, চালচুলোহীন। পাঞ্জাবি-পায়জামা, পায়ে চটি পড়া ধূলি-ধূসর একজন মানুষ। যে নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়িয়ে বেড়ায়। এমন কারো সঙ্গে বিয়ে দিতে স্বভাবতই মেয়ের বাপদের রাজী হওয়ার কথা নয়।

অথচ হালের চিত্র পুরাই উল্টো। রাজনীতি মানেই এখন অর্থ-বিত্ত-বৈভব। রাজনীতি মানেই এখন শক্তিমান মানুষ। অবশ্য আরেকটা দিকও রয়েছে। রয়েছেন ক্ষমতার বাইরে থাকা নিগৃহীতরা। কিন্তু তাদেরও লক্ষ্য ক্ষমতা। ব্যতিক্রম বাদে রাজনীতির অর্থই এখন ক্ষমতা প্রাপ্তি। পুরোটা না পারলেও অন্তত চাকু ছুড়ে কিছুটা ভাগ নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা।

শুরু করেছিলাম ‘এতিমের হক’ নিয়ে। বিশেষ করে মাদ্রাসার এতিমখানায় যারা বড় হয়ে ওঠে, তাদের একটা সময়ের খাওয়া-পড়া চলে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির টাকায়। এবার সেই টাকা পাওয়া হয়ে উঠলো না। জানি না, এতিমদের সেই কদিনের ভরণপোষণ এবার কী দিয়ে হবে। হয়তো কেউ বলবেন, ‘আল্লাহই দেখবেন’। সত্যি কথা, তিনিই তো দেখেন। না হলে ওরা এবং সঙ্গে আমরাও চলে-ফিরে, খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকি কী করে!

ফুটনোট : পরিচিত ‘জোক’ রয়েছে না একটা। ওই যে, ইদি আমিনের উগান্ডায় এসে একজন বললেন, ‘এদেশে এলেই কঠিন নাস্তিকও আস্তিক হয়ে যায়। দেশটা চলছে কীভাবে সেই বিস্ময়ে, সেটা ভেবেই।’

লেখক: কাকন রেজা, কলাম লেখক ও সাংবাদিক

Advertisement
Advertisement
Advertisement
Advertisement
Advertisement
Advertisement

আরও দেখুন