সোহেল আদি: গত ২৪ ঘণ্টায় (৪ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা থেকে ৫ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টা) পর্যন্ত নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৭৮৮ জন। এরমধ্যে রাজধানী ঢাকায় রোগীর সংখ্যা ৩৩১ জন আর রাজধানীর বাইরে ঢাকা বিভাগসহ সারাদেশে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৫৭ জন। গতকাল (৪ সেপ্টেম্বর) এ সংখ্যা ছিল ৮২৯ জন। এরমধ্যে ঢাকার ভেতরে ডেঙ্গুরোগী ছিলেন ৩৪৫ জন। ঢাকার বাইরে ছিলেন ৪৭৫ জন। এ হিসাবে এখনও ঢাকার বাইরে ঢাকার চেয়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতাল থেকে চিকিতসা নিয়ে ছাড়পত্র নিয়েছেন এক হাজার পাঁচ জন। রাজধানী ঢাকার হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন ৫৯১জন। বিপরীতে ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলো থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন ৪১৪ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার জানন, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৪ শতাংশ কমেছে।তবে, কন্ট্রোল রুমের হিসাব থেকে দেখা যায়, সেপ্টেম্বরের প্রথম পাঁচদিনে আক্রান্ত হয়েছে তিন হাজার ২৫৬ জন। আর সারাদেশে এই মুহূর্তে ভর্তি থাকা মোট রোগীর সংখ্যা তিন হাজার ৩৭১ জন। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় রয়েছেন এক হাজার ৭২৯ জন আর ঢাকার বাইরে রয়েছেন এক হাজার ৬৪২ জন। সারাদেশে চিকিতসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন শতকরা ৯৫ শতাংশ ডেঙ্গু রোগী। এদিকে, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) ডেথ রিভিউ কমিটি ৯৬টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে মোট ৫৭ জনের মৃত্যু ডেঙ্গুতে হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে।কন্ট্রোল রুম জানায়, চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৭৪ হাজার ৩৫৩ জন। এরমধ্যে চিকিতসা নিয়ে বাড়ি ফেরা মোট রোগীর সংখ্যা ৭০ হাজার ৭৯০ জন। খুলনা মেডিক্যালে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুর মৃত্যু : ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিতসাধীন অবস্থায় শ্রাবন্তী নামে পাঁচ বছরের এক শিশু মারা গেছে। বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বেলা আড়াইটায় সে মারা যায়। খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক ফিজিশিয়ান (আরপি) ডা. শৈলেন্দ্র নাথ বিশ্বাস এ তথ্য জানান। শ্রাবন্তী যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের সোহাগের মেয়ে। ডা. শৈলেন্দ্র নাথ বিশ্বাস জানান, শিশুটি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ৩১ আগস্ট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। ফরিদপুরে কমতে শুরু করেছে ডেঙ্গু রোগির সংখ্যা : ফরিদপুরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগির সংখ্যা দুই হাজার অতিক্রম করেছে। গত ২০ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ফরিদপুরের হাসপাতাল গুলোতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিতসা নিয়েছে ২ হাজার ৪২ জন। এরমধ্যে সুস্থ্য রোগির সংখ্যা ১৫শ একজন। বর্তমানে জেলার হাসপাতাল গুলোতে দুইশর নিচে নেমে এসে ভর্তি ডেঙ্গুর সংখ্যা। যা এতো দিন থাকতো কম-বেশী তিনশোর উপরে। আস্তে আস্তে কমে আসছে ডেঙ্গু রোগির সংখ্যা, তবে জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে রয়ে গেছে শঙ্কা ও ভয়। কমতে শুরু করলেও সামনের দিন গুলোতে আরো বেশী সচেনতার উপর গুরুত্ব দিতে বলেছেন এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা। এদিকে, গত ২৪ ঘন্টায় ৩২ জন নতুন রোগি ভর্তি হয়েছে হাসপাতাল গুলোতে। গত বুধবার ভর্তি হয়েছিলো ৩৯ জন রোগি। বর্তমানে জেলার হাসপাতাল গুলোতে ১৯৮ জন ডেঙ্গু রোগি ভর্তি রয়েছে। তবে জেলায় এ পর্যন্ত সুস্থ্য হয়ে বাড়িতে ফিরে গেছেন ১৫০১ জন ডেঙ্গু রোগি। যেটাকে বড় সফলতা মনে করছেন চিকিতসকরা। এরমধ্যে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে সবচেয়ে বেশী সংখ্যক রোগি। এখানে ২০ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ভর্তি হয় ৮৮ জন রোগি। এরপর ০১ আগষ্ট থেকে ০৪ আগষ্ট পর্যন্ত ভর্তি হয় ১১৯২ জন রোগি। এখান থেকে সুস্থ্য হয়ে বাড়িতে ফিরে গেছে ৯৯৭ জন রোগি। এটা একটা বড় সফলতা হাসপাতালটির। তারপরেও এখানে গত দেড় মাসে শিশুসহ এ পর্যন্ত ০৭ জন ডেঙ্গু রোগির মৃত্যু ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে হাসপাতালটিতে ১৫৩ জন রোগি চিকিতসা নিচ্ছে। ৩৫ জনকে ঢাকা রের্ফাড করা হয় উন্নত চিকিতসার জন্য বলে জানান হাসপাতালটির পরিচালক ডাঃ কামদা প্রসাদ সাহা। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ কামদা প্রসাদ সাহা বলেন, ফরিদপুরের মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি ৫০০ বেডের একটি হাসপাতাল। এখানে ফরিদপুর জেলা ছাড়াও পাশ্ববর্তী জেলা রাজবাড়ী, মাগুরা, ঝিনাইদহ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, নড়াইল ও গোপালগঞ্জ থেকে ডেঙ্গু রোগি ভর্তি হয়েছে। জেলার ৯টি উপজেলা ও ৭টি জেলা থেকে ডেঙ্গু রোগি আসাতে এখানে ডেঙ্গু রোগির সংখ্যা দেশের অন্য যেকোন বড় হাসপাতাল থেকে সব সময় বেশি ছিলো। আর আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি সব সময় ভালো কিছু করার। এখানে ডেঙ্গু রোগিদের জন্য আলদা ওর্য়াড করা হয়েছে। এছাড়া রোগিদের সব ধরনের ঔষধ সরবরাহ করা হচ্ছে প্রথম থেকেই বিনা পয়সায়। ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মোহাঃ এনামুল হক জানান, গত ২০ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ফরিদপুরে ডেঙ্গু আক্রান্ত মোট ২০৪২ জন ভর্তি হয়েছিলেন। এরমধ্যে গত ২৪ ঘন্টায় নতুন ভর্তি হয়েছে ৩২ জন ডেঙ্গু রোগি। বর্তমানে ভর্তি আছেন ১৯৮ জন। এছাড়া ১৫০১ জন রোগি চিকিতসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন, ৩৩৬ জনকে ঢাকায় রের্ফাড করা হয়েছে। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সরকারী হিসেবে শিশুসহ এ পর্যন্ত ০৭ জন ডেঙ্গু রোগির মৃত্যু ঘটনা ঘটেছে।