এশিয়া খবর ডেস্ক:: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ নিয়ে ক্ষমতাসীন জোটের অন্যতম
নেতা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের বক্তব্যের পর সংসদ ভেঙে দেয়া উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে শনিবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত আইনজীবী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়া মুক্তি আইনজীবী আন্দোলনের চেয়ারম্যান ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারের সভাপতিত্বে আইনজীবী সমাবেশ উদ্বোধন করেন সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন।
সমাবেশ পরিচালনা করেন গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়া মুক্তি আইনজীবী আন্দোলনের মহাসচিব অ্যাডভোকেট এবিএম রফিকুল হক তালুকদার রাজা।
বক্তব্য রাখেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, সিনিয়র অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার মাহাবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা, অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, অ্যাডভোকেট আনিছুর রহমান খান, অ্যাডভোকেট আইয়ুব আলী আশরাফী, অ্যাডভোকেট শাহ আহমেদ বাদল, অ্যাডভোকেট আব্বাস উদ্দিন, অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির, অ্যাডভোকেট একেএম আজিজুর রহমান, অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন, অ্যাডভোকেট খোরশেদ মিয়া আলম, অ্যাডভোকেট এম বজলুর রহমান, আবদুল বাছেদ ভ‚ঞা, মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান মুজিব, অ্যাডভোকেট আ. মোতালেব, অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান, অ্যাডভোকেট মাহাফুজুল হক, অ্যাডভোকেট মীর মিজানুর রহমান, অ্যাডভোকেট আতাহার হোসেন চৌধুরী সবুজ, অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, জাকারিয়া মোল্লা প্রমুখ।
মওদুদ আহমদ বলেন, মেনন দেরিতে হলেও সত্য কথা বলেছেন। পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকে আরাম-আয়েশ করে এ কথা বলেছেন। যা আমরা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের রাত ২৯ ডিসেম্বর বর্তমান সরকার ‘সিভিলিয়ান ক্যু’ করে ক্ষমতা দখল করেছে। এ সরকারের রাষ্ট্র পরিচালনা করার কোনো নৈতিক বা সাংবিধানিক অধিকার নেই। সুতরাং মেননের বক্তব্যের পর সরকারের উচিত ছিল সংসদ ভেঙে দেয়া। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে আবার দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসবে। সুশাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ফিরে আসবে এবং প্রশাসন একটি নিরপেক্ষ প্রশাসন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। পুলিশ-র্যা বকে রাজনৈতিক কারণে ব্যবহার করার বদলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে ব্যবহার করা উচিত। মুক্তি পাবেন আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া। তার মুক্তির জন্য কারও কাছে দেনদরবার করার দরকার হবে না।
খালেদা জিয়ার জামিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আদালত তাকে জামিন দেবেন না। কারণ সরকার তার জামিন চায় না। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এক বছর আট মাসে তার জামিন হয় না। তার জামিন আইনের মাধ্যমে হবে বলে আমি বিশ্বাসও করি না। তার মুক্তির একমাত্র পথ রাজপথ। আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনতে হবে। ফিরিয়ে আনতে হবে দেশের গণতন্ত্র। সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান ‘টু লেইট’। টেন ইয়ার্স টু লেইট। কারণ এ দশ বছর আপনারা কিছুই করেননি। এখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছেন। এতে কোনো লাভ হবে না। আপনারা দুর্নীতি দূর করতে পারবেন না।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, নির্বাচনের নামে ভোট ডাকাতি হয়েছে। আমরা প্রতিবাদ করতে পারলাম না এই অবৈধ নির্বাচনের বিরুদ্ধে। এটা আমাদের ব্যর্থতা, আমাদের দুর্ভাগ্য। এ সরকার দুর্নীতি, লুট, গুমসহ কোনো কুকর্মই বাদ দেয়নি। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরোধী দল থেকে যে ধরনের নেতৃত্ব আসার কথা ছিল, তা আসেনি। আমরা সে কারণে ক্ষুব্ধ। একটি সরকার দেশের ওপর অত্যাচার, অনাচার, অবিচার করে যাচ্ছে। আমরা প্রেস ক্লাবে বক্তব্য দেয়া ছাড়া জনগণকে নিয়ে রাজপথ উত্তপ্ত করতে পারিনি। আমি আজ ওয়াদা করে যাচ্ছি, ইনশাআলাহ বাংলাদেশের আইনজীবী সমাজ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই অবৈধ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করবে। জনগণ ভোট দেয়নি। সাংবিধানিকভাবে তাদের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই। আমরা দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে এ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।
বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হচ্ছে- এমন দাবি করে খন্দকার মাহবুব বলেন, নিম্ন আদালতের বিচারকদের জন্য নীতিমালা করে বলা হল- শৃঙ্খলাবিধিসহ সব ক্ষমতা আইন মন্ত্রণালয়কে দেয়া হল। সুপ্রিমকোর্টকে ‘সাক্ষী গোপাল’ বানানো হল। সেই কারণে আজ নিæ আদালতে টেলিফোনের ওপর বিচার হয়, জামিন হয়। এই অবস্থা চলতে পারে না।
খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজপথ উত্তপ্ত করে সরকারকে বাধ্য করতে হবে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, একজন অসুস্থ মহিলা, চলাফেরা করতে পারেন না। বলেছিলাম তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক, কিন্তু সেই চিকিৎসাও তিনি পাচ্ছেন না। খালেদা জিয়া যদি আমাদের মধ্য থেকে চলে যান, বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিলুপ্ত হবে। তাই গণতন্ত্রের স্বার্থে, মানবাধিকারের স্বার্থে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। যদি অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা না করা হয়, তাহলে বাংলাদেশের মানুষ গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাবে। সারা দেশে জাতীয়তাবাদী শক্তি উজ্জীবিত, হাজার হাজার কর্মী আছে। তাদের নিয়ে আমরা মাঠে নামব।