
পঞ্চগড় প্রতিনিধি॥: পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার
চাকলাহাট ইউপির শিংরোড অমরখানা গ্রামের বাসিন্দা হরিশ চন্দ্র রায় দেনার দায়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তার দাবী মতে,দাদন ব্যবসায়ির নিকট সুদে টাকা নেওয়ার পর দ্বিগুন টাকা পরিশোধ করেছেন। তারপরেও দাদন ব্যবসায়ির টাকার চাপে কুল কিনারা না পেয়ে তিনি এই অভিযোগ করেছেন। তার এ অবস্থা দেখে তার প্রতিবেশী আতœীয় -স্বজনরা তার পাশে দাঁিড়য়েছেন এবং গনপিটিশন দাখিল করেছেন স্থানীয় প্রশাসন সহ নানা স্তরে। এনিয়ে এলাকায় নানা আলোচনা-সমালেচনা বিদ্যামান।
হরিশ চন্দ্র রায় সংসারের অভাব-অনাটন ও সন্তানাদির লেখাপড়া খরচাদির জন্য এই টাকা নেওয়ার পর পথে বসার উপক্রম হয়েছে তার। লিখিত ও হরিশের মৌখিক অভিযোগে জানা গেছে এই সব ঘটনা। পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউপির শিংরোড এলএসএস সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হরিশ চন্দ্র রায় ।তিনি তার অভিযোগে বলেন,অভাবের সংসারে আমার তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে থাকি। এমতাবস্থায় দাদন ব্যবসায়ি মো. শাহীনুদ্দীন সহকারী শিক্ষক শিংরোড রতনীবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের নিকট পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে সুদে আসলে আঠারো লাখ টাকা পরিশোধ করি। এরপর শাহীনুদ্দীন আমার ষ্ট্র্যাম্প ও চেক ফেরত না দিয়ে আমার বড় মেয়ের নামে উকিল নোটিশ প্রেরন করেন। এছাড়া শিংরোড প্রধান পাড়ার বাসিন্দা মোঃ একরামুল হক আমার নামে ফাঁকা চেকে ইচ্ছে মতো টাকার অঙ্ক বসিয়ে চেকগুলি ডিসওনার দেখিয়ে আমার ও আমার কণ্যাদ্বয়ের বিরুদ্ধে মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে।শিংরোড ভূজারীপাড়ার মোঃ নিজাম উদ্দীনের নিকট ছয় লাখ টাকা নেই। পরে সুদে-আসলে পয়ত্রিশ লাখ টাকা পরিশোধ করি।শিংরোড বৈরাগীপাড়ার মোঃ শাহীনের নিকট চার লাখ টাকা গ্রহন করে চার লাখ টাকা পরিশোধ করি। আব্দুর রাজ্জাকের নিকট পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়ে আশি হাজার টাকা পরিশোধ করি। উত্তর শিং রোড খাল পাড়ার মোঃ মন্তাজুল ইসলামের নিকট চার লাখ টাকা নিয়ে দশ লাখ টাকা পরিশোধ করি।কিন্তু তারপরেও তার বড় ভাই মন্টু হক সরকার আমার নামে গত দুই মাস আগে একটি ষ্ট্র্রাম্পে চার লাখ টাকা লিখিয়া নেন। শিংরোড নমলা পাড়ার মোঃ মনজুরুল ইসলামের নিকট তিন লাখ টাকা নিয়ে তিন লাখ টাকাই পরিশোধ করি। বোদা থানাধীন কাজীপাড়ার মোঃ আহসান হাবিবের নিকট এক লাখ টাকা নিয়ে এক লাখ আশি হাজার টাকা পরিশোধ করি। অথচ টাকা পরিশোধের পর আমার ও আমার মেয়ে ও ছেলের নামে ফাঁকা ও স্বাক্ষরিত চেক ও ষ্ট্রাম্প গুলি ফেরত দিচ্ছেনা বলে তার অভিযোগ।
এ বিষয়ে শিক্ষক হরিশ চন্দ্র রায়ের সাথে সরাসরি কথা বললে, তিনি বলেন ‘আমি এখন নি:স্ব’ । আমি এ সব দাদন ব্যবসায়ীর নিকট টাকা নিলেও তার কয়েকগুন বেশী টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে আমার নিজ নামীয় ১২ বিঘা আবাদি জমি বসত বাড়িটিও বিক্রি করে স্থানীয় সকল পাওয়নাদার দাদন ব্যবাসায়ির সুদ-আসল টাকা পরিশোধ করার পরও উক্ত দাদন ব্যবসায়ির মামলার হুমকিতে ভীত-সন্ত্রস্ত জীবন যাপন করে আসছি।
এদিকে হরিশের অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিংরোড রতনীবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ শাহীনুদ্দীনের সাথে সরাসরি কথা হয়, তিনি বলেন ‘প্রকৃত পক্ষে হরিশ চার লাখ ২০ হাজার আমার নিকট নিয়েছে এবং সে নিজে স্বাক্ষর করে সোনালী ব্যাংকের একটি চেকের পাতায় চার লাখ ২০ হাজার টাকার একটি চেক প্রধান করেন। এবং হরিশ বলেন, একমাস পর এই টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নিয়েন। পরে সে টাকা আর ব্যাংকে পাইনি। তিনি আজ দিবে কাল দিবে বলে সময় ক্ষেপন করতে থাকেন। তাকে কেন টাকা ধার দিলেন এমন প্রশ্ন করলে শাহীনুদ্দীন বলেন, আমি হরিশ চন্দ্র রায়ের স্কুলে এক সময় সভাপতি ছিলাম ‘তাই দিয়েছি’। মোঃ আব্দুর রাজ্জাক মুঠো ফোনে বলেন, আমি কোন টাকাই পাইনি’। হরিশ চন্দ্র তার মেয়ের চাকরীর জন্য টাকা নেয় । কেন এতো টাকা দিলেন বললে তিনি বলেন ‘স্যার হবেন তো।
মোঃ মন্তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমার লেনদেন নাই’। আমার ছোট ভাই মন্টু সরকার টাকা দিয়েছে’ আমি দেই নি।
এদিকে মোঃ আহসান হাবিবের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘ হরিশ একদিন শাহীনুদ্দীনকে নিয়ে আমার বাসায় আসেন ‘তখন বাসায় আমি ছিলাম না’ পরে আমার স্ত্রীর নিকট শাহীনুদ্দীনের পরিচয়ে কিছু টাকা নেয় এবং পরে তা দিয়ে দেয়’ আমার সাথে তার কোন লেনদেন নাই।
শিক্ষক হরিশ চন্দ্র রায় রোববার মুঠো ফোনে বলেন , আজ সোমবার (২ডিসেম্বর) এ,এসপি সাহেব আমাকে ‘এ বিষয়ে তার দপ্তরে ডেকেছেন। সাথে ওদের আটজনকে ও ডেকেছেন।পুলিশ অফিসে উপস্থিত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে শিক্ষক শাহীনুদ্দীন বলেন, আমি এখন রাজশাহীতে আছি’ আমি হয়তো উপস্থিত থাকতে পারবো না। এদিকে এতো টাকা লেনদেনের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকে।এ বিষয়ে পঞ্চগড় সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আমিরুল ইসলাম অভিযোগটি শুনেছেন বলে জানান। তিনি বলেন হরিশ তো এখন অসহায় ‘তার তো এখন কিছু নেই’