নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি:: নারায়ণগঞ্জ শহরের হকার সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন
পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মনিরুল ইসলাম।মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বেলা ১২ টার দিকে চাষাঢ়া শহিদ মিনারে সাংবদিকদের সাথে প্রেস ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা জানান।
মনিরুল ইসলাম বলেন, আজকে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রেস ব্রিফিং না। আমরা যারা অফিসার আছি দেখতে চাচ্ছিলাম যে আসলে নারায়ণগঞ্জ শহরের হকার পরিস্থিতি কোনো উন্নতি হয়েছে কি না। চাষাড়া মোড় থেকে শুরু করে ২ নং রেল গেট পর্যন্তা আমরা দু‘পাশ চক্কর দিয়েছি। আমরা দেখতে পেয়েছি শহরের হকার পরিস্থিতি সন্তোষজনক।এ মুহূর্তে ফুটপাত হকারমুক্ত।
তিনি বলেন, আমার সাথে গত দু একদিন আগে হকার সমিতির সভাপতি এবং সেক্রেটারি ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে গিয়েছিল। তারা আমাদের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে সপ্তাহে ১ দিন বা ২ দিন ফুটপাতে বসতে চায়। বাকি ৫ দিন তারা স্বপ্রণোদিত হয়ে শহরটা ক্লিন (পরিস্কার) রাখবে। আমি বলেছি এটা তো আমার পক্ষে একা সম্ভবনা। এর সাথে সংশ্লিষ্ট যারা তাদের সাথে কথা বলে আমরা ফাইনাললি ডিসিশন নেবো।
তিনি আারও বলেন, ইতিমধ্যে আমি আমার জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে কথা বলেছি। আমাদের যে সংসদ সদস্য এবং সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তার সাথে কথা বলেছি। আমার মনে হয় আমরা একটা মতৈক্যে পৌঁছাতে পারবো। যদি এটা পসিবল (সম্ভব) হয় তাহলে আমার মনে হয় নারায়ণগঞ্জে অদূর ভবিষ্যতে হকারের যে ঝামেলা সেটা আর থাকবেনা।
মনিরুল ইসলাম উল্লেখ করেন, এখানে যারা হকার আছেন তার তো আসলে খেটে খাওয়া মানুষ। তাদেরকে যদি আমরা রুট আউট করে দেই তাহলে কারও জন্য মঙ্গলজনক হবেনা। আমার মনে হয় যে এটার সাথে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির সম্পর্ক থাকা স্বাভাবিক। তাদের যে মূল সমস্যা ওটা বিবেচনায় এনে আমরা সর্বসম্মতি ক্রমে একটা সমাধানে পৌঁছতে চাই। আমার মনে হয় এটা একটা সম্ভবপর বিষয় হবে। এটা যদি হয়ে যায় তাহলে আমার মনে হয় স্থায়ী একটি সমাধানে আমরা পৌঁছতে পারবো।
পুলিশ সুপার বলেন, দেখা যায় যতক্ষণ পুলিশ একটিভ থাকে তখন হকার ক্লিন থাকে। আবার পরবর্তীতে বিচ্ছিন্নভাবে তারা বসে যায়। তখন আর এ সমস্যটা থাকবেনা। আসেলে একার পক্ষে বা পুলিশের পক্ষে এর সমাধান করা সম্ভনা এট একটা মাল্টি পার্টি কনট্রাক্ট মেটার এখানে সবার অংশগ্রহণ দরকার। তারপরও পুলিশের একক প্রচেষ্টায় শহরের হকার পরিস্থিতি আমরা নিয়ন্ত্রণে করতে সক্ষম হয়েছি। এখনও নিয়ন্ত্রণে আছে। আমরা এ সমাধানে পৌঁছতে পারলে দীর্ঘদিনের যে হকার সমস্য সেখান থেকে আমারা একটা স্থায়ী সমাধান পাব, পরিত্রাণ পাবো।
এক প্রশ্নে জাবাবে তিনি বলেন, আমদের প্রায় তিন চার কিলোমিটার হকারমুক্ত রাখা সম্ভব না। আমদের পক্ষে যেটা হয় সেটা হলো আমাদের ফুট প্যাট্রোল থাকে। তার এ মাথা থেকে ওই মাথা যায়। আবার তারা ফিরে আসার আগে আবার হকাররা বসে যায়। এটা হচ্ছে ডগস এন্ড ক্যাটস (ইঁদুর-বিড়াল) ওইধরনের একটা খেলা আর কি। আমরা যে একটা স্থায়ী সমাধানের জন্য কাজ করছি তাহলে আমরা এক সপ্তাহের মধ্যে একটা র্যাপিড ডেভেলপমেন্ট (দ্রুত উন্নয়ন/সমাধান) দেখতে পাবো।
নবাব সিরাউদ্দৌলা রোড দখল করে হকার বসা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ওয়ান বাই ওয়ান আমদের যদি বঙ্গবন্ধু সড়ক যদি হকারমুক্ত হয়ে যায় বাকী বিষয়গুলো ওয়ান বাই ওয়ান আসবে।
শহরে অটো বাইক প্রবেশ নিষিদ্ধ হলেও শহরের নবাব সিরাউদ্দৌলা রোডের কলিরবাজার মোড় এবং ফলপট্টির মোড়ে সবসময় অটো বাইক থাকে এবং ওখানে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে এ সুযোগ করে দে বলে অভিযোগ আছে । এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, হতে পারে আমরা কোনো সম্ভাবনাই উড়িয়ে দেইনা। আপনারা তিন দিন আগেও দেখেছেন যে ৫১ টি অটো রিক্সা সিচ করা হয়েছে। তারও প্রায় দেড় সপ্তাহ আগে বিসিক রোড এবং অন্য জায়গা থেকে অটো সিচ করেছি। টোটাল বলতে গেলে মনে হয় ১০০-১৫০ অটো সিচ করা হয়েছে। তারপরও এর দৌরাত্ম থামছে না।
মনিরুল ইসলাম বলেন, হাইওয়েতে অটো বন্ধ হয়েছে। আমাদের অবস্থান হচ্ছে শহরের মধ্যে কোনো অটো চলবে না সেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।
গতকালকে বিজয় দিবসের প্রজন্ম ৭১ নামের একটি সংগঠনের বিজয় র্যালি থেকে পুলিশের পরিদর্শক ও উপপিরদর্শককে লাঞ্ছিত করার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাদের কথা হচ্ছে বাংলাদেশে যে গণতান্ত্রিক ধারা চলছে, এটা সবাই গণতান্ত্রিক চর্চা করার অধিকার রাখে। কিন্তু এটা করতে গিয়ে যদি সব ভুলে যায় যে, আমাদের লিগাল বাউন্ডারি আছে কি-না, তাহলে আমদের একশন নেয়া ছাড়া কেনো বিকল্প নেই।
গতকালকে যে ঘটনা ঘটেছে আপনারা জানেন, আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। আমদের কাছে যেটা মনে হয় কারও পলিটিক্যাল আইডেনটিটি কিন্তু মুখ্য বিষয় নয়। আপনি যখন দেখবেন যে কেউ যদি কেনো পরাধ করে সে অপরাধী। সে কোন পার্টির এটা কেনো ব্যাপার না। বিগত দিনেও কিন্তু আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। ফতুল্লা থানায় ঘটনা করেছে এতে আমার পুলিশও বাদ যায়নি। পুলিশের যারা জড়িত ছিল তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আউট সাইডে যারা তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সে যে দল বা গোষ্ঠীর সাথে সংশ্লিষ্ট থাকুক না কেনো এটা কোনো মুখ্য বিষয় না। আপনি অপরাধ করবেন আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এটাই হচ্ছে পরিস্কার বার্তা।
তিনি আরও বলেন, মহান বিজয় দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে এসে তারা বিষয়টাকে অন্য দিকে টার্ন করার চেষ্টা করে। তখন কর্মরত পুলিশ সদস্য ইনন্সপেক্টর এবং সাব-ইনন্সপেক্টর ছিলো। বাধা দিতে গেলে তারা তাদের লাঞ্ছিত করে এবং এ বিষয়ে আমরা মামলা নিয়েছি। বিশেষ ক্ষমতা আইনে এবং পেনাল কোডে আমরা মামলা নিয়েছি। ইতিমধ্যে আমরা ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছি।
শহরের ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাম্প্রতিককালের আমি একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরতে চাই। বিগত ২ মাসের অপরাধ পরিসংখ্যান যদি আপনারা পর্যালোচনা করেন তাহলে দেখবেন, এর মধ্যে আমদের জেলায় একটা ডাকাতিও হয়নি। দস্যুতা, অপহরণের ঘটনা নাই, নারী নির্য়াতনের মামলা কমে আসছে, মার্ডার ৫০ ভাগ কমে গেছে। আমাদের ওভারঅল অপরাধ পরিসংখ্যান কিন্তু উন্নতি হয়েছে।
তিনি বলেন, আসলে ক্রাইমকে কখনওই জিরো ফিগারে নিয়ে আসা সম্ভব না। আমরা চেষ্টা করছি নিয়ন্ত্রণ রাখার। যে দু একটা বিষয় বললেন এখানে আশেপাশে দুএকটা জায়গায় ছিচকে চোর রয়ে গেছে, যারা টানা পার্টি।এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি। মাঝখানে কিশোর অপরাধ বেড়ে গিয়েছিল। ফতুল্লায় ৬ জনকে ধরা হয়েছে। গত কালকে ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলা হয়েছে।কিশোর যে গ্যাং বা কিশোর অপরাধ বলতে কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।
আমাদের সামাজিক অবক্ষয় বা মা-বাবার অবহেলার কারণে হচ্ছে এ সব অপরাধ হচ্ছে। বিষয়টির আমরা একটা প্রোফাইল তৈরি করে ফেলেছি। আমাদের যে কাজ এটা শেষ হয়ে গিয়েছে। কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ধরা পরছে এবং গতকালকেও ৪ জন ধরা পরেছে। সদরেও কাজ চলছে। ছোট ছোট যে অপরাধ এটা কমে আসবে এবং এটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) মেহেদী ইমরান সিদ্দিকী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) নূরে আলম, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সালেহ উদ্দিন আহম্মেদ, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামানসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তরা।এর আগে তিনি শহরের শহরের চাষাঢ়ার মোড় থেকে ২ নং রেলগেট পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সড়ক পরিদর্শন করেন