নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি:: ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে সওজ’র জায়গায়
গড়ে উঠা অবৈধ ট্রাকস্ট্যান্ড থেকে প্রতি মাসে ২০ লাখ টাকারও বেশি চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে মাদকসেবী ও ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম। আলোচিত ৭ খুনের ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামী নূর হোসেন যেভাবে অপকর্ম করেছিল বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ডভ্যান ও পিক-আপ মালিক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেলুর নেতৃত্বে সেভাবেই অপকর্ম হচ্ছে বলে একাধিক সুত্রের দাবি।
এদিকে গত ৭ বছর ধরে সওজ কর্তৃপক্ষ ইজারা না দেওয়ায় সরকার ১ কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এছাড়াও ট্রাকস্ট্যান্ডের সীমানা প্রাচীর না থাকায় উত্তর সীমানা দিয়ে কয়েক কেটি টাকার জমি বেদখলে চলে গেছে বলে জানা গেছে।
জানা যায়, সড়ক ও জনপথ (সওজ), নারায়ণগঞ্জ বিভাগের শিমরাইলস্থ জায়গায় অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা ট্রাকস্ট্যান্ডে চাঁদা আদায়ের মহোৎসব চলছে। এ ট্রাকস্ট্যান্ডে একসাথে প্রায় ৫ শতাধিক ট্রাক অবস্থান করতে পারে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে পূর্বাঞ্চলীয় ১৮টি জেলায় দৈনিক শত শত পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও পিক-আপ চলাচল করছে। উল্লেখিত যানবাহনের বেশির ভাগ চালকরা বিশ্রাম কিংবা অন্য কোন প্রয়োজনে এ ট্রাকস্ট্যান্ডে তাদের যানবাহন পার্কিং করে। এসময় তাদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা আদায় করে দেলোয়ারের লোকজন। খে^াঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইজারাবিহীন এ ট্রাকস্ট্যান্ড ট্রাক কাভার্ডভ্যান ও পিক-আপ মালিক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেলুর দখলে রয়েছে। নেপথ্যে তাকে শেল্টার দিচ্ছে ৭ খুনের ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামী নূর হোসেনের ভাই জজ মিয়া ও তার ভাতিজা কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল।
দেলোয়ারের নেতৃত্বে নানা অপকর্ম সংঘটিত হওয়ায় ট্রাকস্ট্যান্ডটি পরিণত হয়েছে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে। মাদক ও জুয়ার আসরের পাশাপাশি চাঁদা আদায় হচ্ছে নিয়মিত। সমিতির কার্যালয়ের পিছনে বসে জুয়ার আসর। চলে রাত ভর। এর পাশাপাশি চলে ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ ও গাজা বিক্রি। এ আসরের বিপরীত পাশে মহাসড়কের দক্ষিণে বসে পতিতাতের নিয়ে নাচ গানের আসর। এসব থেকে নিয়মিত মাসোহারা আদায়ের অভিয়োগ রয়েছে দেলোয়ারের বিরুদ্ধে।
সওজ সুত্র জানায়, গত ২০১৩-২০১৪ সালে এ ট্রাকস্ট্যান্ডটি ১৪ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছিল নুর হোসেন। ৭ খুনের ঘটনার পর এ ট্রাকস্ট্যান্ডটি অবৈধ ভাবে দখলে রেখেছে নূর হোসেনের লোকজন। ইজারা না দেওয়ায় গত ৭ বছরে সরকার ১ কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হযেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সওজ’র একটি সুত্র জানায়, সওজের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ট্রাকস্ট্যান্ড থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা মাসোয়ারা নিয়ে অবৈধ ভাবে দখলে রাখার সুযোগ করে দিয়েছে দেলোয়ার বাহিনীকে। এ সুযোগে দেলোয়ার বাহিনী প্রতি মাসে ২০ লাখ টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করছে। আর আদায়কৃত চাঁদার টাকার একটি অংশ ৭ খুনের ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামী নূর হোসেনের কাছে চলে যায় বলে জানা গেছে। এছাড়াও ট্রাকস্ট্যান্ডের সীমানা প্রাচীর না থাকায় উত্তর সীমানা দিয়ে কয়েক কোটি টাকার জমি বেদখলে চলে গেছে বলে জানা গেছে।
খোজ নিয়ে যানা যায়, এ ট্রাকস্ট্যান্ডে কমপক্ষে ৫শ যানবাহন অবস্থান করে। এসব যানবাহন থেকে প্রশাসন ও নিরাপত্তার কথা বলে প্রতি যানবাহন থেকে ৮শ টাকা হিসাবে মাসে ৪ লাখ টাকা আদায় করছে দেলোয়ার বাহিনী।
এছাড়াও এ ট্রাকস্ট্যান্ড থেকে দৈনিক যাতায়অত করা ৩ শতাধিক যানবাহন থেকে থেকে ১৩০ টাকা হারে দৈনিক ৪০ হাজার টাকারও বেশি চাঁদা আদায় হচ্ছে। এ হিসাবে মাসে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে দেলোয়ারের নিয়োজিত লোকজন। এর পাশাপাশি শীতলক্ষ্যা ব্রিজ সংলগ্ন সড়ক দিয়ে বালু ও পাথরবাহী প্রতি ট্রাক থেকে দৈনিক ১০০ টাকা হারে চাঁদা আদায় হচ্ছে। এসব থেকে প্রতি মাসে সর্বমোট ২০ লাখ টাকারও বেশি আদায় করছে দেলোয়ার বাহিনী। সরকারী দলের শীর্ষ দুই নেতা ও প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংস্থার লোকজনদের ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে দেলোয়ার হোসেন ওরফে দেলু।
সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে আমাকে হেয় করতে চাইছে। আমি এ পদে আর থাকতে চাই না।
সওজ’র নারায়ণগঞ্জ বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম জানায়, লীজের জন্য আবেদন করলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান জানান, গতকাল এ থানায় যোগ দিয়েছি। তবে এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।