
এশিয়া খবর ডেস্ক:: ২০১৯ সালে মেয়ে হত্যার অভিযোগে জামাতা মো. কাওসার
গাজীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন পটুয়াখালীর আব্দুল জলিল দুয়ারী। মামলা দায়েরের কয়েকমাস পরই তিনিই আবার পটুয়াখালী আদালতে মেয়ে আত্মহত্যা করেছে মর্মে হলফনামা দাখিল করেন। এরপর বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চে জামিন আবেদনও করেন। আজ মঙ্গলবার একই আদালত শুনানি করে আসামি কাওসার গাজীকে অন্তবর্তীকালীন জামিন আদেশ দেন। একইসঙ্গে, হাইকোর্ট শ্বশুর জলিলের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২১১ ধারায় মামলা রজু করতে পটুয়াখালির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন।
আসামি কাওছার গাজীর পক্ষে শুনানি করেন এ্যাডভোকেট আসাদ মিয়া। অপরদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বশির উল্লাহ। পরে বশির উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, কাওছার গাজীকে অন্তবর্তীকালীন জামিন দিয়ে জলিল দুয়ারীর বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য সরবরাহের অভিযোগে মামলা করতে পটুয়াখালী থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
অপরদিকে কাওছার গাজীর আইনজীবী এ্যাডভোকেট আসাদ মিয়া বলেন, জলিল দুয়ারী জামাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের তিন মাস পরেই পটুয়াখালী আদালতে হলফনামা দিয়ে বলেছেন, গ্রামের কিছু লোকের প্ররোচণায় জামাতার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছিলেন। আমরা আদালতকে ওই বিষয়টি জানিয়েছি। আদালত আসামির জামিন ও বাদীর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতে কাওছার গাজী ও সাথী আক্তারের মেয়ের জবানবন্দি প্রসঙ্গে আাইনজীবী আসাদ মিয়া বলেন, সাথী আক্তারের মৃত্যুর পর দুই মাস মেয়েটি তার নানার বাড়িতে ছিল। তাদের শেখানো কথা সে জবানবন্দিতে বলেছে।
শ্বশুর জলিল জামাইয়ের জামিন আবেদনে হলফনামা করে জানান, প্রকৃতপক্ষে তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তিনি অন্যের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে জামাতা কাওসারের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন। কাউসার গাজীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে জামিন দিলে তার কোনও আপত্তি নেই। তিনি আরও উল্লেখ করেন, আমার মেয়ে সাথী আক্তার জামাতাকে ভুল বুঝে রাগান্বিত হয়ে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে অন্যের দ্বারা প্ররোচিত না হয়ে গলায় দঁড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনায় মেয়ের জামাই ও তার বাবা-মা জড়িত না। পরবর্তীতে কিছু কুচক্রীলোকের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমি বাদী হয়ে মামলা দায়ের করি যা আদৌ সত্য নয়। আমার মেয়ের জামাই দুটি নাবালক সন্তানের পিতা। ওদের ভবিষৎ দেখাশোনার জন্য মামলাটি পরিচালনা করা আমার আবশ্যিকতা নেই এবং মামলা থেকে আসামিকে অব্যহতি দিলেও আপত্তি নেই।
অথচ মামলার এজাহারে বাদী জলিল দুয়ারী উল্লেখ করে ছিলেন, ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পটুয়াখালীর টাউন বহাল গাছিয়া গ্রামের বড় গাজী বাড়িতে তার মেয়ে সাথী আক্তারকে মাথায় আঘাত করে। পরে মৃত ভেবে লাশ পাশর্^বর্তী একটি নির্মাণাধীন ভবনে ঝুলিয়ে রেখে স্বামী কাউসার ও পরিবারের অন্যরা। এ ঘটনায় পটুয়াখালীর থানায় কাউসার, সাথীর শ^শুর জাফর গাজী (৬০), শ^াশুরি মোসাম্মাত ফাতেমা (৫০) ও ভাসুর আলামিন গাজীর (৩৫) বিরুদ্ধে হত্যা ও আলামত গোপনের মামলা করেন জলিল দুয়ারি। আসামি কাউসারকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এ ঘটনায় সাথীর পাঁচ বছরের মেয়ে পটুয়াখালির সংশ্লিষ্ট আদালতে জবানবন্দিদে জানায়, ‘আম্মুকে আব্বু লাঠি দিয়ে মাথায় এবং দাদা শরীরে আঘাত করে হত্যা করে। পরে ছাগলের রশি দিয়ে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখে। চিকিৎসকদের দেয়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মাথায় আঘাতের বিষয়টি উঠে আসে। গত বছরের ৩১ আগষ্ট এ মামলায় পটুয়াখালির সংশ্লিষ্ট আদালতে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। তাতে সাথীর শ^শুর, শ^াশুরি ও ভাসুরকে অব্যাহতি দিয়ে একমাত্র আসামি করা হয় স্বামী কাউসারকে। অভিযোগপত্রে সাথীর পাঁচ বছরের শিশুসহ সাক্ষী করা হয় মোট ১৯ জনকে।