
এশিয়া খবর ডেস্ক:: জেনারেল এরশাদের মৃত্যুর কারণে তাকে জেনারেল মঞ্জুরকে
হত্যার মামলা থেকে অব্যহতি দিয়ে এখন চার্জশিট দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে চল্লিশ বছর আগে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর একজন জেনারেলকে হত্যার এক মামলা থেকে প্রয়াত প্রেসিডেন্ট এরশাদকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
১৯৮১ সালে চট্টগ্রামে ঐ ব্যর্থ অভ্যুত্থানে নিহত হন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। আর এর কয়েকদিন পর হত্যা করা হয় সেনাবাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তা জেনারেল আবুল মঞ্জুরকে।
এই মামলার তদন্ত এবং বিচারকাজ অনেকদূর এগিয়ে যাওয়ার পরও এক সম্পূরক চার্জশিটে জেনারেল এরশাদ এবং আরেকজন অভিযুক্ত জেনারেল আব্দুল লতিফকে তাদের মৃত্যুর কারণে অভিযোগ থেকে অব্যহতি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জেনারেল মঞ্জুর হত্যা মামলায় আদালত অধিকতর তদন্তের ব্যাপারেও আদেশ দিয়েছিল সাত বছর আগে ২০১৪ সালে।
এখন এসে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সম্পূরক চার্জশিট দিলো।
এই অধিকতর তদন্তের মাঝেই জেনারেল এরশাদ এবং আরেকজন অভিযুক্ত অবসপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আব্দুল লতিফ মারা গেছেন। ফলে এই দু'জনকে অব্যহতি দেয় হলো সম্পূরক চার্জশিটে।
সিআইডি পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সম্পূরক চার্জশিট ঢাকার দায়রা জজ আদালতে পেশ করা হয়েছে।
অবসরপ্রাপ্ত মেজর কাজী এমদাদুল হক সহ তিনজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা যারা আগে অভিযুক্ত ছিলেন, তাদের সম্পূরক চার্জশিটেও অভিযুক্ত হিসাবে রাখা হয়েছে।
কিন্তু ২০১৪ সালেই মামলাটির বিচার কার্যক্রম যুক্তিতর্ক পর্যন্ত হয়েছিল অর্থাৎ একেবারে শেষ পর্যায়ে গিয়েছিল। সে সময়ই অধিকতর তদন্তের বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।
মামলাটিতে শুরু থেকেই সরকার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন আসাদুজ্জামান রচি। তিনি বলেছেন,"সাক্ষী নেয়ার এক পর্যায়ে দেখা গেছে যে জেনারেল মঞ্জুরের স্ত্রী এবং মেয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। কিন্তু তাদের সাক্ষী করা হয়নি। ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে তাদের সাক্ষী করার জন্য আমরা আদালতের কাছে অধিকতর তদন্তের আবেদন করেছিলাম। আদালত তা মঞ্জুর করে অধিকতর তদন্তের আদেশ দিয়েছিল।"
জেনারেল এরশাদ প্রায় ৯০ বছর বয়সে মারা যান ২০১৯ সালের ১৪ই জুলাই।
জেনারেল এরশাদ প্রায় ৯০ বছর বয়সে মারা যান ২০১৯ সালের ১৪ই জুলাই।
মামলার এজাহারে বলা রয়েছে, ১৯৮১ সালের পহেলা জুন জেনারেল মঞ্জুরকে পুলিশের হেফাজত থেকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নেয়ার পর তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
ঘটনার ১৪ বছর পর ১৯৯৫ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় জেনারেল মঞ্জুরের ভাই মামলাটি করেছিলেন।
মামলার শুরু থেকে তদন্ত করেছেন সিআইডি পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা আব্দুল কাহার আকন্দ। তিনি বলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের কারণেই আদালত অধিকতর তদন্তের আদেশ দিয়েছিল। এখন মামলার বিচার কার্যক্রম আবার এগিয়ে নেয়া যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
"যেহেতু মামলার সাক্ষী নিয়ে একটা বিষয় ছিল। সেটাতো ঠিক হয়েছে।এখন কোন জটিলতা নাই। এরশাদ সাহেব নাই। কিন্তু বাকি তিনজন অভিযুক্ত আছে। ফলে বিচার কাজ শেষ করতে পারে।"
তবে অভিযুক্তদের একজনের পক্ষের একজন আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, মামলাটির তদন্ত এবং বিচার কাজ চলার সময় কয়েকবার সরকার বদল হয়েছে এবং সে সব সরকারের সময় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে দফায় দফায় সময়ের আবেদনের কারণে বছরের পর বছর কোন অগ্রগতি হয়নি।
এই আইনজীবী বলেছেন, মূল অভিযুক্ত জেনারেল এরশাদের মৃত্যুর পর এখন সম্পূরক চার্জশিট দেয়া হলেও মামলাকে সরকার পক্ষ কতটা গুরুত্ব দেবে-তা নিয়ে তার সন্দেহ রয়েছে।
তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আসাদুজ্জামান রচি বলেছেন,"অন্য অভিযুক্ত যারা আছে, তাদের বিচারতো শেষ করতে হবে। সেটা এখন করা হবে।"
এদিকে অবসরপ্রাপ্ত কাজী এমদাদুল হক সহ তিনজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা যারা শেষ পর্যন্ত সম্পূরক চার্জশিটেও অভিযুক্ত রয়েছেন, তাদের সকলেই জামিনে মুক্ত আছেন।