রাজশাহী প্রতিনিধিঃ: রাজশাহী মহানগর যুবলীগের মোট ছয় জনকে মাদক,
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি ও দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের দায়ে যুবলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া ওই ছয়জনের মধ্যে যুবলীগের দুই নেতার দলীয় কার্যক্রমও স্থগিত করা হয়েছে।
রবিবার (২৭ জুন) সকালে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বিষয়টি নিশ্চিত করেন রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রায়হানুর রহমান রয়েল।
এবিষয়ে তিনি এশিয়া খবর২৪ ডট কমের প্রতিবেদককে বলেন, ‘গত ১৭ জুন নগরীর ১০ নম্বর ওয়ার্ডের লিচুবাগান এলাকার একটি তুচ্ছ গন্ডগোলকে কেন্দ্র করে রাজশাহী মহানগর যুবলীগের কয়েকজন নেতা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির চেষ্টা করেন। অন্যদিকে, কয়েকটি ওয়ার্ডের যুবলীগের নেতার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়। তার পরিপ্রেক্ষিতে গত শনিবার (২৬ জুন) দুপুর ১টার দিকে রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সভাপতি মো. রমজান আলী রেলস্টেশনে তৃতীয় তলায় অবস্থিত তার চেম্বারে এক জরুরী বৈঠক ডাকেন। বৈঠকে সকলের মতামতের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।’
তিনি বলেন, ‘ওই দিনেই রাতে মহানগর সভাপতি মো. রমজান আলী ও সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন বাচ্চু স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি অবগত করা হয়। আজ সকালে মহানগর যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক মারফত এ তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রদান করা হয়েছে।’
প্রেস বিজ্ঞপ্তির বলা হয়েছে, ১৭ জুন রাত ৯ টার দিকে মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার হেতেম খাঁ লিচুবাগান এলাকায় তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে বিভ্রান্তকর মিথ্যে তথ্য ও সাম্প্রদায়িক প্রচারণা করা হয়। বলা হয়- মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রকি কুমার ঘোষের নেতৃত্বে মসজিদে হামলা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আর বলা হয়েছে যে, সাম্প্রদায়িক উস্কানি ও মাদকের সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সদস্য আমিনুল ও সাধন কুমার ঘোষের দলীয় কার্যক্রম স্থগিত করা হলো এবং বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ করা হবে। একই অপরাধে ১০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন শাওন ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের আহব্বায়ক এরশাদ শেখকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হল। অন্যদিকে, মাদকের সাথে জড়িত ও সংগঠন বিরোধী কর্মকান্ডে দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের দায়ে ১৯ নম্বর ওয়ার্ড (উত্তর) যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ শেখ ও ২৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সাব্বিরকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হল।’
বিষয়ে রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সভাপতি মো. রমজান আলী বলেন, ‘কেন্দ্র ও রাজশাহী মহাগনর আওয়ামীলীগের নির্দেশনাক্রমে এবং বহিষ্কৃত ছয় নেতার অপরাধের সত্যতার ভিত্তিতে গতকাল (২৬ জুন) এক জরুরী বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘কিছুদিন যাবৎ বেশ কয়েকজন ওয়ার্ডের যুবলীগ নেতার অপতদপরতা ও গতিবিধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমার অনুরোধ থাকবে দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি- দলীয় আচরণবিধি ভঙ্গ করে কেউ যেনো অসামাজিক ও অসাংগঠনিক কোনো প্রকার কর্মে লিপ্ত না হন। অন্যথায়, দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে একই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, গত ১৭ জুন নগরীর লিচুবাগান এলাকায় একটি হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ফেসবুকভিত্তিক একটি চ্যানেলে যুবলীগের কয়েকজন নেতা মসজিদে হামলা হয়েছে দাবি করে বক্তব্য দিতে থাকেন। এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যায়। তাৎক্ষণিক বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
পরে ওই ঘটনায় ধর্মীয় উস্কানি দানের অপরাধে দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়াও এ ঘটনায় সদ্যবহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা শাওনসহ ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা বেশ কয়েকজনকে আসামি করে শনিবার (২৫ জুন) থানায় একটি মামলা হয়েছে।