
বিনোদন ডেস্ক :: এফডিসিতে আজ নানা বর্ণিল আয়োজনের মধ্যদিয়ে চলছে ষষ্ঠ জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উদযাপন।
অন্যান্য বারের চেয়ে এবার দিনটি একটু বেশি আলোড়ন তুলেছে উদযাপনের প্রস্তুতি পর্ব থেকেই। কারণ চলচ্চিত্র দিবস উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান ও অনুষ্ঠানের সভাপতি হিসেবে বর্ষিয়ান অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমামের থাকা না থাকা নিয়ে বিভক্তি তৈরি হয়ে যায় প্রস্তুতি পর্বের শুরু থেকেই। সেই বিভক্তি থেকেই সরকারি উদ্যোগে একপক্ষ এবং চলচ্চিত্র পরিবারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উদ্যোগে আরেক পক্ষ আজ এফডিসিতে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উদযাপন করছে। সকাল থেকেই শিল্পী, কলাকুশলীতে মুখর হয়ে উঠেছে এফডিসির আঙ্গিনা। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘ঐতিহ্যের ভিত্তি ধরি, দেশের ছবি রক্ষা করি’।
হারানো দিনের ব্যবসা সফল চলচ্চিত্রের নানান পোস্টার পুরো বিএফডিসি জুড়ে ভিন্নরকম রং ছড়াচ্ছে। অনেকেই এই পোষ্টারে চোখ রেখে হারিয়ে যাচ্ছেন সোনালী দিনের নানান স্মৃতির মেলায়। আজ সকাল সাড়ে নয়টায় উৎসবের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। এফডিসির প্রশাসনিক ভবন চত্বরে এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন তিনি। বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, তথ্য মন্ত্রণালরে সম্পর্কিত সাংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমতউল্লাহ, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সুকুমার রঞ্জন ঘোষ, এমপি এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মালেক। বেলুন ও পায়রা উড়ানোর মধ্যদিয়ে চলচ্চিত্র দিবস উদযাপন আয়োজনের পর্দা ওঠে। সে সময় আরো উপস্থিত ছিলেন এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমির হোসেন। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু তার বক্তব্যে বলেন, চলচ্চিত্র অঙ্গনের সকলের চ্যালেঞ্জ ছিলো আধুনিক প্রযুক্তি রপ্ত করা, ডিজিটাল পদ্ধতিতে সিনেমা নির্মাণ ও প্রদর্শন করা। চ্যালেঞ্জ ছিলো জঙ্গি-সন্ত্রাস থেকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্রকে উদ্ধার করা। এইসব চ্যালেঞ্জ থেকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নজরে এফডিসি ডিজিটাল এফডিসিতে পরিণত হয়েছে। যেসব সমস্যা আছে তা খুব শিগগিরই সমাধান করা হবে। তিনি আরো বলেন, চলচ্চিত্র সমাজ বদলাতে সহায়তা করে। সমাজে নানা অনিয়ম, অপরাধকে তুলে ধরে মানুষকে সচেতন করে। একটি জাতির মানসিক উন্নয়নে চলচ্চিত্রের ভূমিকা অপরিসীম। সেটা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অনুধাবন করতে পেরেছিলেন বলেই এই দেশে এফডিসি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার হাত ধরেই বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের বিকাশ শুরু হয়। আজকের এই দিনে তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্রের সিনিয়র অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান, চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া, পূজা চেরি, চিত্রনায়ক রোশান, চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ও মধুমিতা সিনেমা হলের অন্যতম কর্ণধার ইফেতেখার উদ্দিন নওশাদ, পরিচালক জাকির হোসেন রাজুসহ এফডিসির কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তবে এই আয়োজনে চলচ্চিত্র দিবস উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান সৈয়দ হাসান ইমাম মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন না। প্রসঙ্গত প্রতি বছর চলচ্চিত্রের তারকাদের নিয়েই এই আয়োজন করতো এফডিসি। কিন্তু এবারে জাতীয় চলচ্চিত্র উদযাপন কমিটিতে সৈয়দ হাসান ইমামের সভাপতিত্ব নিয়ে বিরোধ তৈরি হওয়ায় তথ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে এফডিসির আয়োজন বয়কট করেছে চলচ্চিত্র কর্মীরা। তারা আলাদাভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। এফডিসির মান্না ডিজিটাল কমপ্লেক্সের সামনে একটি স্টেজ করা হয়। সেখানে চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। এ সময় চিত্রনায়ক ফারুক, ইলিয়াস কাঞ্চন, মিশা সওদাগর, সুব্রত, জায়েদ খান, সাইমন, জয় চৌধুরী, অভিনেত্রী সুজাতা, পপি, পরিচালক মুশফিকুর রহমান গুলজার, মোহাম্মদ হোসেন জেমী, শাহীন সুমনসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। বর্ষীয়ান অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান বলেন, চলচ্চিত্র বানাতে টাকা লাগে। সরকার ছবি বানানোর জন্য টাকা নানানভাবে ভাগ করে দিচ্ছেন। তাতে ভালো মানের চলচ্চিত্র নির্মাণ হচ্ছে না। এটাকে আমার কাছে চলচ্চিত্রের ফিতরা মনে হয়। ঈদের ফিতরা যেমন হয়, এটা তেমনি চলচ্চিত্রের ফিতরা। এই টাকায় কি ছবি বানানো যায় নাকি? কাজেই এই চলচ্চিত্র দিবসে আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, ৪-৫ কোটি টাকা যাই বরাদ্দ থাকুক সেটা যেন দুজনের মধ্যে দেয়া যায়। যারা ভালো ছবি বানাতে পারেন। এদিকে চলচ্চিত্র দিবসের কর্মসূচি হিসেবে বেলা ৩টায় দেড় ঘণ্টা ব্যাপ্তির একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে আট নম্বর ফ্লোরে। বিকাল সোয়া পাঁচটায় হবে আধাঘণ্টা ব্যাপ্তির বিশেষ টক শো। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত থাকবে চলচ্চিত্র ও সংগীত শিল্পীদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। জমকালো এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাচ-গান ও অভিনয়ে পারফর্ম করবেন জনপ্রিয় শোবিজ তারকারা।