
ডেস্ক রিপোর্ট:: দেশের সবচেয়ে বড় গণমাধ্যম চল”িচত্রের নির্মাণ প্রতিষ্ঠান বিএফডিসিতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে অঘটন।
আর এসব অঘটনের ফলে ঢাকাই চল”িচত্রেও দিন দিন বাড়ছে অ¯ি’রতা। চল”িচত্রের সঙ্গে জড়িত প্রযোজক পরিবেশক সমিতি, পরিচালক সমিতি, শিল্পী সমিতি, সিডাবসহ বেশকিছু সংগঠন রয়েছে এফডিসিতে। আর এসব প্রতিষ্ঠানে চল”িচত্রসংশ্লিষ্ট সবাই নিয়মিত আড্ডা দেন এবং চল”িচত্রের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা করেন।
সাম্প্রতিক সময়ে শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে ঢালিউডের শীর্ষ নায়ক শাকিব খানকে এফডিসিতে মাঝরাতে ধাওয়া, ভোট কারচুপির অভিযোগে নির্বাচনের ফলাফলে নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি, পরিচালক সমিতি থেকে বাপ্পারাজের সদস্যপদ বাতিল, শাকিব খানকে পরিচালক সমিতি থেকে উকিল নোটিশ, মাহির বাসায় লিগ্যাল নোটিশ, গাজী মাহবুবকে পরিচালক সমিতির অফিস থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগসহ আরো কয়েকটি ঘটনায় চল”িচত্র অঙ্গনে অ¯ি’রতা চরম আকার ধারণ করেছে। এসব বিষয় নিয়ে প্রযোজক পরিবেশক সমিতির আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন দিলু বলেন, বিভিন্ন সংগঠনে যারা ক্ষমতায় বসে আছেন তাদের আরো বেশি ধৈর্যের অধিকারী হতে হবে।
একটা পজিশনে গেলে মানুষকে সহ্যশক্তি একটু বাড়াতে হয়। কথায় কথায় রেগে যাওয়া বা কাউকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি মনে হয় ঠিক হ”েছ না। প্রত্যেকের সঙ্গে কথা বলে চল”িচত্রের উন্নতির জন্য বুঝেশুনে সব সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত। কারণ এমনিতেই চল”িচত্রের বাজার ভালো নেই। এরপর এসব ঘটনায় জল আরো ঘোলা হ”েছ।
সবশেষ ঘটনা গত শনিবারের। আমাদের দেশের গুণী অভিনয় শিল্পী নায়করাজ রাজ্জাককে কেন্দ্র করে এফডিসির পরিচালক সমিতিতে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। নায়করাজকে নিয়ে দুই পরিচালকের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে বলেও সে সময় এফডিসিতে উপ¯ি’ত অনেকে জানিয়েছেন। বিশেষ করে ‘দেশের চল”িচত্রে রাজ্জাকের কোনো অবদান নেই’- পরিচালকদের আড্ডায় এমন মন্তব্য করে বিপাকে পড়ে যান চল”িচত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন। শনিবার দুপুরের পর এফডিসির পরিচালক সমিতি কার্যালয়ে রাজ্জাককে নিয়ে তিনি এমন মন্তব্য করায় ‘প্রেমের তাজমহল’খ্যাত নির্মাতা গাজী মাহবুব প্রতিবাদ করে বসেন।
এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে মহাসচিব তার ওপর চড়াও হন এবং একপর্যায়ে তাকে ধাওয়া করেন বলে জানিয়েছেন গাজী মাহবুব। এমনকি তাকে পরিচালক সমিতির সদস্যপদ থেকে নিষিদ্ধ করার কথাও বলা হয়। এসব ঘটনা প্রসঙ্গে পরিচালক কাজী হায়াৎ বলেন, প্রচ- অ¯ি’রতার মধ্যদিয়ে যা”েছ আমাদের সময়। সঠিক নেতৃত্বেরও অভাব রয়েছে। একথা বললে হয়তো তারা ভাববেন, আমি পরিচালক সমিতির নেতা হতে পারিনি বলে এসব বলছি। আসলে এদের বোঝা উচিত গুণী পরিচালক আলমগীর কবির কোনো সংগঠন করেননি।
কোনো নেতা ছিলেন না তিনি, এমনকি সংগঠনের সদস্যও হতে চাননি। প্রয়াত গুণী নির্মাতা তারেক মাসুদও সংগঠনের সদস্য হতে চাননি। কিš‘ পরিচালক সমিতির অনেকে একেকটা পদ পেয়ে নিজেকে মনে করছেন, তারা সিনেমায় একটি হিস্ট্রি হয়ে গেছেন। রাজ্জাক সাহেবের মতো মানুষকে জীবদ্দশায় শুনে যেতে হলো, তার কোনো অবদান নেই চল”িচত্রে। চল”িচত্রের সব মানুষের জন্য এ বিষয়টি অনেক লজ্জার। যে নেতৃ¯’ানীয় লোক এসব বলছেন তাদের বোঝা উচিত তারা নিজেরা কারা?
তাদের কী অবদান আছে এই চল”িচত্রে? তিনি আরো বলেন, রাজ্জাক সাহেবকে নিয়ে এমন মন্তব্য করাটা তো দেশদ্রোহিতার শামিল। কারণ দেশ উনাকে আজীবন সম্মাননা দিয়েছে, তিনি স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন। তাকে এ কথা বলা মানে দেশদ্রোহিতা। যিনি বলেছেন তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়া উচিত। যখন যে কথা বলছে তাকে নিষিদ্ধ করার কথাও বলছেন তিনি। বরং, যিনি এসব বলছেন তার নিজের হাতেই তো ছবি নেই, কাজ নেই। বলা যায়, নিজেই নিষিদ্ধ হয়ে বসে আছেন। যারা কাজ করছে তাদের হঠাৎ করে নিষিদ্ধ করা হ”েছ। এসবের মানে কি? এভাবেই অ¯ি’রতা বাড়ছে। নায়করাজ রাজ্জাক তাকে ঘিরে যে ইস্যু তৈরি হয়েছে সে বিষয়ে বলেন, সবকিছুই শুনেছি। কিš‘ এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।
এরা যা করছে সত্যিই আমার কিছু বলার নেই। বাংলাদেশের মানুষরা আমাকে ভালোবেসে যে ইজ্জত দিয়েছেন সেটাই আমার কাছে যথেষ্ট। এখন আমার একটাই কথা-ইন্ডাস্ট্রি যেভাবে যা”েছ তাতে নাথিং টু সে। বক্তব্যের বাইরে চলে গিয়েছে এই ইন্ডাস্ট্রি। ঢালিউডের শীর্ষ নায়ক শাকিব খান এ ঘটনা জানার পর বলেন, আমি বর্তমানে পাবনায় ‘রংবাজ’ ছবির কাজ করছি। এ ঘটনাটা আমি শুনলাম। একধরনের স্বৈরচারিতা চলছে। রাজ্জাক সাহেব তো শুধু শিল্পী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নন, তিনি পুরো ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মনে করি আমি। ইন্ডাস্ট্রির সফলতার পেছনে তার অবদান অনেক। আজকে তার পরিবারকে শিল্পী সমিতির নির্বাচনের দিন এফডিসিতে ওসি সাহেবের অনুমতি নিয়ে ঢুকতে হয়েছিল।
তারা তো দুঃখ করে বলেছে, তারা কি রাজ্জাক সাহেবের পরিবারকে চেনেন না, তারা কি বাপ্পারাজকে চেনেন না। এরপর নির্বাচনের দিন এফডিসির ভেতরে তো ছিল শত শত বহিরাগত। তারা কিভাবে তাহলে নির্বাচনের দিন ভেতরে প্রবেশ করলো। এরপর বাপ্পারাজকে পরিচালক সমিতির চিঠি পাঠানো, সদস্যপদ বাতিলসহ সবশেষ শনিবার রাজ্জাক সাহেবকে নিয়ে এমন কটু মন্তব্য। এসব কারণে ঢাকাই চল”িচত্রে চরম অ¯ি’রতা বিরাজ করছে। শুনলাম তো, এবারের ঈদে নাকি একটি নাটকও তৈরি হবে। যার নাম ‘কথা বললেই নিষিদ্ধ’। তো কোথায় চলে গেছে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি। আমার মনে হয়, এসব বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ দরকার। মানবজমিন