
এশিয়া খবর ডেস্ক:: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. এমরান হোসেন।
ঢাবি ক্যাম্পাসের অত্যন্ত প্রিয় মুখ। ক্যাম্পাসে মূকাভিনেতা এমরান নামেই পরিচিত তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে এসেই জনপ্রিয় মূকাভিনেতা মীর লোকমানের মূকাভিনয় দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে যুক্ত হন টিএসসি-কেন্দ্রীক মূকাভিনয় চর্চার সংগঠন ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশনে।
মূকাভিনেতা এমরানের জন্ম বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলার গুনাহার গ্রামে। বাবা মো. বেলাল হোসেন পেশায় কৃষক মা মোছা. মনোয়ারা বেগম গৃহিণী। পুরো দস্তুর কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেও শৈশবকাল থেকেই বড় হয়েছেন সাংস্কৃতিক পরিবেশের মধ্য দিয়ে। বাবা গ্রাম্য থিয়েটারে অভিনয় করবার সুবাদে মঞ্চের সাথে পরিচয় সেই বাল্যকাল থেকেই। তালুচ ও,এইচ,কে,এম উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণীতে অধ্যয়নের সময় প্রথম গ্রাম্য থিয়েটারের মঞ্চে উঠেন তিনি। ‘কানকাটা রাজাকার’ নামক নাটিকায় মূখ্য চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। তারপর মাধ্যমিক পড়াকালীন সময়েই ‘বকুলপুরের স্বাধীনতা’,’পদ্মগোখরো’সহ বিভিন্ন জনপ্রিয় আঞ্চলিক নাটকে অভিনয় করেন। নবম শ্রেণীতে পড়াকালীন বিদ্যালয়ের বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় তিনটি ইভেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন এমরান।
সাংস্কৃতিক চর্চার পাশাপাশি এমরান ছাত্র হিসেবেও ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। মাধ্যমিকে ‘জিপিএ-৫’ পেয়ে পাশের পর উচ্চমাধ্যমিক পড়ার জন্য বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী সরকারি আজিজুল হক কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হোন তিনি। বিজ্ঞান বিভাগে প্রচণ্ড পড়ার চাপে কিছুটা ছিটকে গিয়েছিলেন মঞ্চ থেকে। ২০১৪ সালে ‘জিপিএ-৫’ পেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করলেন।
শুরু থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবার তীব্র ইচ্ছা ছিলো। প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি আর অধ্যাবসায়ের জোড়ে ২০১৪ সালে ভর্তি হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভূগোল ও পরিবেশ’ বিভাগে।
প্রাণের ক্যাম্পাসে পদচারণার পর থেকেই একাডেমিক পড়াশোনার বাইরে যুক্ত হলেন বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে। বিতর্ক, কবিতা আবৃত্তি আর মূকাভিনয় চর্চা তার বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনকে প্রাণবন্ত করে তুললো। বর্তমানে তার আবাসিক হল ফজলুল হক মুসলিম হলের বিতর্ক চর্চারত ক্লাব এফএইচ হল ডিবেটিং ক্লাবের সহ-সভাপতি, টিএসসিকেন্দ্রিক আবৃত্তি সংগঠন ‘স্বরকল্পন’এর প্রায়োগিক সদস্য হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশে মূকাভিনয় চর্চায় বর্তমানে দেশের অন্যতম অগ্রগামী মূকাভিনয় সংগঠন ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশন’-এর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। তিনি স্বপ্ন দেখেন মূকাভিনয় নিয়ে ভবিষ্যতে আরো ভালো কিছু করার।
সাংস্কৃতিক চর্চার পাশাপাশি একাডেমিক ও সাংগঠনিক কাজেও সমতালে এগিয়ে যাচ্ছেন এমরান।
স্নাতকে(সম্মান) বিগত তিন শিক্ষাবর্ষেই প্রথম শ্রেণিতে কৃতকার্য হয়েছেন তিনি। তার আবাসিক হলে সাংস্কৃতিক পরিবেশ নিশ্চিত করবার প্রয়াসে হলের কয়েকজন সংস্কৃতিমনা শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে চলমান করেছেন ‘ফজলুল হক মুসলিম হল সাংস্কৃতিক সংসদ(নিলয়)’। শিক্ষা, সংস্কৃতির পাশাপাশি তৃণমূলে সামাজিক কুসংস্কার দূরীকরণের চিন্তা থেকে ‘ইতিবাচক সমাজ সৃষ্টির প্রত্যয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ’ শ্লোগানটিকে ধারণ করে এলাকায় গড়ে তুলেছেন এসএজি(ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন অফ গুনাহার) নামক সামাজিক সংগঠন। এসএজি-এর কার্যক্রমে অনাধুনিক ঐ তৃণমূলে ইতিবাচক পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগছে।
বছর তিনেক আগে মূকাভিনেতা শাহরিয়ার শাওনের হাত ধরে ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটি মাইম অ্যাকশন’-এর তিনমাস ব্যাপী মূকাভিনয় কর্মশালায় অংশ নিয়েছিলেন এমরান। কর্মশালায় প্রায় অর্ধশত অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে থেকে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন যা তার উদ্দীপনাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিলো। তিনি আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় মূকাভিনয় করে নিজ হল থেকে একমাত্র প্রতিযোগী হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। বর্তমান পর্যন্ত শতাধিক মূকাভিনয় প্রদর্শনীতে অভিনয় করেছেন প্রতিভাবান এই মূকাভিনেতা। বিশ্বে বাংলাদেশের মূকাভিনয় এম্বাসেডর নামে খ্যাত বিশ্ববিখ্যাত মূকাভিনেতা কাজী মশহুরুল হুদার কাছ থেকেও দীক্ষা নিয়েছেন তরুণ এই মূকাভিনেতা।
বর্তমানে অভিনয়ের পাশাপাশি মূকাভিনয় প্রযোজনার নির্দেশনাও দিচ্ছেন এমরান। সম্প্রতি মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে নির্মিত, তার নির্দেশিত “ঘোর” প্রযোজনাটি দর্শকনন্দিত হয়েছে। এছাড়াও তার নির্দেশিত বাংলাদেশ, স্বপ্নের বিবর্তণ, নরসুন্দর ইত্যাদি দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
ভবিষ্যতে মূকাভিনয়ের ওপর বিদেশ থেকে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করতে চান তরুণ মূকাভিনেতা এমরান। বাংলাদেশ তথা সারাবিশ্বে মূকাভিনয়ের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির জন্য কাজ করতে চান তিনি।
অদূরভবিষ্যতে বিনোদনের পাশাপাশি সুশিক্ষা, জনসচেতনা, সমাজ সংস্কারের অংশ হিসেবে মঞ্চ, টেলিভিশন কিংবা পথনাটক সব মাধ্যমেই মূকাভিনয়ের প্রত্যক্ষ উপস্থিতি দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এই উদিয়মান মূকাভিনয় শিল্পী।