
স্টাফ রিপাের্টার: দেশীয় বস্ত্র শিল্পে একটি নির্ভরযােগ্য নাম নরসিংদী। এ জেলার বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র মাধবদী শিল্পাঞ্চল ঘিরে গড়ে উঠেছে ছােট-বড় অসংখ্য পাওয়ারলুম বা যন্ত্রচালিত তাঁতশিল্প। এছাড়া জেলার চৌয়ালা শিল্প এলাকায়ও রয়েছে বেশকিছু কারখানা।
জেলা টেক্সটাইল শিল্পমালিক সমিতি'র সূত্রে জানা যায়, নরসিংদী সদর, রায়পুরা ও শিবপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছোট-বড় চার শতাধিক পাওয়ারলুম রয়েছে। এসব কারখানায় লক্ষাধিক তাঁত আছে। এর মধ্যে দুই শতাধিক ইতােমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। সূত্রমতে, এ জেলায় দৈনিক ৬০-৬৫ লাখ গজ কাপড় উৎপাদিত হয়। সরেজমিনে চৌয়ালা শিল্প এলাকার কয়েকটি টেক্সটাইলের সামনে গিয়ে দেখা যায়, প্রধান ফটকে বড় বড় তালা ঝুলছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা টেক্সটাইল শিল্পমালিক সমিতি'র সিদ্ধান্তেই এক সপ্তাহ আগে এসব কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একইভাবে শিল্পী টেক্সটাইল, অনন্যা টেক্সটাইল, শফিক টেক্সটাইল, আল-মদিনা টেক্সটাইল, শাহেন শাহ টেক্সটাইল, আল আরাফাহ্ টেক্সটাইল, আতাউর টেক্সটাইল প্রভৃতি কারখানাও বন্ধ দেখা গেছে।
সম্প্রতি সুতার মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং এর বিপরীতে উৎপাদিত কাপড়ের দাম না বাড়ায় যেসব কারখানার মালিক ব্যাংক ঋণের উপর নির্ভরশীল তারা একে একে মিল-ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দিচ্ছে। এতে বেকার হয়ে পড়ছে হাজার হাজার শ্রমিক। পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে তারা। বাজার মন্দ থাকায় দেশের বাইরে কাপড় রপ্তানি করতে না পেরে মালিকরা হয়ে পড়েছে দিশেহারা। সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব। সাম্প্রতিক সময়ে সুতা, রং ও কাঁচামালের মূল্য বেশি হওয়ায় তুলনামূলকভাবে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় কাপড় বিক্রিতে লোকসান গুণতে হচ্ছে ফ্যাক্টরি মালিকদের। এজন্য অনেক কারখানা ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে এবং আরো অনেক কারখানা বন্ধ হওয়ার পথে এগুচ্ছে। বেকার হচ্ছে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক/কর্মচারী। সেই সাথে বেড়েছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও রাহাজানির মতো ঘটনা। ব্যাপক হারে কারখানা বন্ধ হলে শুধু শ্রমজীবী মানুষ নয় এর প্রভাব পড়বে রাজস্ব আদায়েও। এছাড়াও যেসব কারখানা ব্যাংক ঋণের উপর নির্ভরশীল তাদের সমস্যা আরো প্রকট হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মিল মালিকরা। এ সমস্যার মূল কারণ জানতে বস্ত্র শিল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দেশের বাইরে কাপড় রপ্তানিতে নানা জটিলতা এবং অবৈধ পথে অবাধে ভারত, চীনসহ অন্যান্য দেশ থেকে কাপড় ও তৈরি পোশাকের অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে না পারলে ব্যয়বহুল ও উন্নতমান সম্পন্ন কাপড় তৈরি করে বর্তমান বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। কারণ দেশী কাপড়ের মান যতই উন্নত হোক না কেন বিদেশি সীল আর বিদেশি কাপড় হলেই অধিকাংশ ক্রেতা আকৃষ্ট হয় বিদেশি কাপড়ের দিকে। এ কারণে দেশীয় বিপণনের ক্ষেত্রেও কাপড় বিক্রিতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফলে দেশীয় বস্ত্র শিল্পের ম্যানচেস্টার খ্যাত মাধবদীর দীর্ঘদিনের নাম-ডাক তথা প্রচার-প্রসার ক্রমেই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দেশীয় বস্ত্রে শিল্প দীর্ঘ তিন যুগের খ্যাতি ক্রমেই হারাতে বসেছে। যে কারণে অনেক কারখানা মালিক ও শ্রমিক এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। সেই সাথে স্থানীয় নতুন উদ্যোক্তার প্রচুর সম্ভাবনা থাকলেও পর্যাপ্ত সুযােগ-সুবিধার অভাবে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এখানে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেনা বলে অনেক শিল্প মালিকরা জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে নরসিংদী তথা মাধবদীর বস্ত্র শিল্প বিলুপ্ত হবার আশংকা করছেন সংশ্লিষ্ট শিল্প-মালিকরা। এভাবে চললে অনেকের মতে, 'তাঁতশিল্প নামক শব্দটি অতীত হতে সময় লাগবে না।’