এশিয়া খবর ডেস্ক:: ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ৫০০ কোটি টাকার চিনি কিনে গুদামে ফেলে রেখেছে চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন।
দুই বছর ধরে এ চিনি গুদামে রয়েছে। অগ্রণী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কেনা হয়েছিল ওই চিনি। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি।
বুধবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। বৈঠকে শিল্প সচিব উপস্থিত থাকলেও তিনি কারণ জানাতে ব্যর্থ হন। তিনি জানান, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ঋণ নিয়ে এই চিনি কেনার সময় তিনি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন না।
কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজের সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশ নেন কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, ইসমাত আরা সাদেক, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, মাহবুবউল আলম হানিফ, মির্জা আজম, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, মো. জিল্লুল হাকিম, মুহিবুর রহমান মানিক। বৈঠকে বিশেষ আমন্ত্রণে অংশ নেন আখ চাষী সমিতির নেতা ও সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধান।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ সাংবাদিকদের বলেন, ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে কেন চিনি কেনা হলো? সেই চিনি এখনও কেন গুদামে? নিজেদের মিলের উৎপাদিত চিনি বিক্রি হয় না। অথচ দেশের বাইরে থেকে চিনি কিনে গুদামে ফেলে রাখা হয়েছে। কার স্বার্থে? এসব প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেনি করপোরেশন বা মন্ত্রণালয়। কমিটি এ ঘটনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী বৈঠকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে বৈঠকে আখ চাষীদের বকেয়া প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ঈদের আগেই পরিশোধ করার জন্য চিনি শিল্প করপোরেশনকে ব্যবস্থা নিতে বলেছে সংসদীয় কমিটি। বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, চলতি অর্থবছর পর্যন্ত আখ চাষীরা করপোরেশনের কাছে ১১৯ কোটি টাকা পাবে। এর বাইরে বীজ সরবরাহকারীরা ৩১ কোটি টাকা পাবে।
এদিকে বেসরকারি চিনি কারখানার মালিকরা নিয়ম ভঙ্গ করছে বলে বৈঠকে অভিযোগ ওঠে। নিয়মানুযায়ী বিদেশ থেকে আমদানি করা অপরিশোধিত চিনি পরিশোধনের পর ৫০ ভাগ রফতানি করার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। তারা পুরোটাই দেশীয় বাজারে বিক্রি করছে। এতে করে দেশীয় মিলে উৎপাদিত চিনি বিক্রি হয় না বলে বৈঠকে আলোচনা হয়। এ বিষয়ে কমিটি বলেছে, নিয়মভঙ্গকারী বেসরকারি চিনি কলগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ ছাড়া বৈঠকে কমিটির পক্ষ থেকে ক্ষেত থেকে তুলে আনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আখ মাড়াইয়ের সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্রটি কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে ফিরিয়ে আনা যায় কী না, তা নিয়েও মন্ত্রিসভায় আলোচনার পরামর্শ দেওয়া হয়।
কেরুর লাভ বাড়ছে:
বৈঠকে জানানো হয়, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের অধীন কেরু অ্যান্ড কোং মিল ২০১৭-১৮ অর্থবছরের পাঁচ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং রেনউইক, যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোং মিল এক কোটি ৬ লাখ টাকা লাভ করেছে। করপোরেশনের অধীন বাকি ১৪টি প্রতিষ্ঠানই লোকসানে।
বৈঠকের কার্যপত্রে দেখা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে লাভ ছিল ২২ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে যা কমে দাঁড়ায় চার কোটি ১৪ লাখ, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে তিন কোটি ৮০ লাখ, ১৬-১৭ অর্থবছরে চার কোটি ৮১ লাখ। কমিটির সভাপতি বলেন, চিনি কলগুলোর আয় বাড়াতে প্রত্যেকটি চিনি কলকে 'বাই প্রোডাক্টের' উৎপাদনে নজর দিতে বলা হয়েছে।