ডেস্ক রিপোর্ট : : ষোড়শ সংশোধনীর রায় ঘিরে তৈরি হওয়া পরিস্থিতির পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলেছে। ওই রায়ের কিছু পর্যবেক্ষণ ঘিরে
গত কয়েকদিনে রাজনীতি ছিল উত্তপ্ত। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সমালোচনায় মুখর ছিলেন সরকারের সর্বস্তরের ব্যক্তিরা। দাবি উঠেছিল, প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের। চিন্তায় ছিল নানা বিকল্প। কিন্তু হঠাৎ করেই দৃশ্যপট বদলে গেছে। সরকারি দলের নেতারা এখন অনেকটা নমনীয় অবস্থানই ব্যক্ত করেছেন। আওয়ামী লীগ দলীয় শীর্ষ আইনজীবীদের কণ্ঠেও এসেছে পরিবর্তনের সুর। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর থেকেই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। যদিও সরকারের একটি অংশের মধ্যে এখনো কিছুটা দুশ্চিন্তা রয়েছে।
রায়ের রিভিউ দায়েরের সময়সূচি নিয়ে অবশ্য সরকারপক্ষ এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। এ নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলা হলেও আইনি প্রক্রিয়া এখনো এগোয়নি। তবে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার জমানায়, নাকি ৫ মাস পর তার অবসরের পর এ রিভিউ আবেদন উত্থাপন করা হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। সুপ্রিম কোর্টে অক্টোবর মাস পুরোটাই অবকাশ। ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আন্দোলন সমাবেশের চাইতে আইনিপন্থা অবলম্বন করাই সমীচীন বলে মনে করেন সাবেক আইনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু। তিনি বলেন, মানববন্ধন, আন্দোলন সংগ্রাম করে সুপ্রিম কোর্টের রায় পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। আপিল বিভাগের কোনো রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিকার হলো সংবিধানের ১০৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রিভিউ পিটিশন। অন্য কোনো পথ নেই। এটা হলো আইনি তর্ক-বিতর্ক। আইনি জটিলতা। তাই সমাধান করতে হলে রিভিউ পিটিশনের মাধ্যমেই করতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট আওয়ামী লীগ বা সরকারের কোনো প্রতিপক্ষ নয়- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, আন্দোলন যা হচ্ছে এটা একটা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া। এখানে চাপ প্রয়োগ বা অন্য কোনো বিষয় নয়। আমাদের যে ক্ষোভ প্রকাশ হচ্ছে তা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া থেকেই হচ্ছে। তবে, প্রতিকার হবে রিভিউ পিটিশনের মাধ্যমে।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের কিছু পর্যবেক্ষণের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে ৬ দিন প্রতিবাদ, বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা। এর মধ্যে রায়ের তাদের ভাষায় অপ্রাসঙ্গিক পর্যবেক্ষণ বাতিলে ২৪শে আগস্ট পর্যন্ত প্রধান বিচারপতিতে আলটিমেটাম দিলেও আগামী ২রা অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিবাদ কর্মসূচি নেই তাদের। তবে, ওই সময়ে দাবি আদায় না হলে আবারো নতুন করে কর্মসূচি দেবেন বলে জানান নেতারা। এদিকে বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে আয়োজিত একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বলেন, গণমাধ্যম তার কিছু বক্তব্য ‘মিসকোট’ করা হয়েছে। এতে করে তাকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্যকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবে দেখছেন আওয়ামীপন্থি শীর্ষ আইনজীবী নেতারা।
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভেকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন গতকাল বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণের বিষয়ে দেশ বিদেশে প্রতিক্রিয়া হয়েছে এবং এটা নিয়ে রাজনীতিকরণ হয়েছে, এটা হয়তো তিনি বুঝতে পেরেছেন। চলমান পরিস্থিতিতে আপনাদের অবস্থান কি হবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে যে কর্মসূচি দিয়েছি তাতে আগামী ২রা অক্টোবর পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। এ সময় পর্যন্ত আমরা দেখবো যে উনি উনার বক্তব্য প্রত্যাহার করেন কিনা। যদি না করেন তাহলে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, আমরা কিন্তু অফিসিয়ালি বা সাংগঠনিকভাবে প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের কথা বলিনি। আমরা শুধু পর্যবেক্ষণের বিষয়টি প্রত্যাহারের কথা তাকে বলেছি। আনুষ্ঠানিকভাবে কিন্তু তার পদত্যাগের কথা বলিনি। আর সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে আমরা সবসময় আশাবাদী।
আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম বলেন, তিনি (প্রধান বিচারপতি) বলেছেন তার বক্তব্য ‘মিসকোট’ না করার জন্য। বক্তব্যে অন্য কিছুতো তিনি বলেননি। শ ম রেজাউল করিম বলেন, উনি কি বলছেন না বলছেন, সেটি আমাদের কাছে মুখ্য নয়। আওয়ামী লীগ দাবি করছে তার রায়ের মধ্যে অপ্রত্যাশিত, অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত যে বিষয়গুলো এসেছে এবং যাতে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা বাতিল করতে হবে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত হয়, সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থা বিতর্কিত হয় আমরা এমন বিষয়গুলোর সমাধান চাই এবং সেই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে আইনিপন্থায় যাওয়া এবং সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে সাবেক আইনমন্ত্রী ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, এটি নিয়ে আসলে রাজনীতি করাটা শোভনীয় মনে করছি না। এটি সমীচীনও হবে না। বিষয়টি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। এ নিয়ে আর তিক্ততা সৃষ্টি করাও উচিত নয়। এ নিয়ে এখন আইনিপন্থায় যাওয়া উচিত এবং আমি নিশ্চিত আইনিপন্থায় গেলে গেলে এর একটি সমাধান আসবে। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি বলেছেন যে, তার বক্তব্য মিসকোট করে মিডিয়ায় এমনভাবে এসেছে যে এ নিয়ে পার্থক্যের সৃষ্টি হয়েছে। এটা একটা দিক। আরেকটা দিক হলো রায়ের অপ্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো সুয়োমোটোর বা স্বউদ্যোগের মাধ্যমে তিনি সমাধান করতে পারেন। আর তা না হলে রিভিউ পিটিশনের মাধ্যমে এর সমাধান হতে পারে।